তরুণ প্রজন্ম নতুন সভ্যতার প্রধান স্থপতি হবে : প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:৩৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘সামাজিক ব্যবসা, যুবসমাজ ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার প্রধান ভূমিকা নেবে তরুণ প্রজন্ম। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রজন্ম যেখানে পুরনো ব্যবস্থার ভেতরে আটকে ছিল, সেখানে আজকের তরুণরা শুধু কী আছে তাই নয়, বরং কী হতে পারে, সেটিও দেখছে। তাদের কল্পনা সীমাহীন, আর যেখানে কল্পনা নেতৃত্ব দেয় সেখানেই উদ্ভাবন জন্ম নেয়।
ড. ইউনূস বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বৈষম্য, যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতি আজ মানবসভ্যতাকে ভয়াবহ সংকটে ফেলেছে। এসব সমস্যাকে আলাদা করে দেখা যাবে না, কারণ সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাঁর ভাষায়, এই ভঙ্গুর গালিচা মেরামতের শক্তি অতীতে নেই, তা লুকিয়ে আছে সেই ভবিষ্যতে যা আমরা সাহস করে কল্পনা করি এবং আজকের সিদ্ধান্তের ভেতরেই।
তিনি মনে করিয়ে দেন, পুরনো সমাধান দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন নবায়িত বহুপক্ষীয় কূটনীতি, গভীরতর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশটি এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অথচ একই সময়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হচ্ছে, জলবায়ু দুর্যোগ সামলাতে হচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টিকে থাকতে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস বিপরীত ফল বয়ে আনবে। বরং আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ন্যায্য রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে মুনাফাকেন্দ্রিক বলে আখ্যা দিয়ে একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। তাঁর মতে, এই নতুন অর্থনীতির কেন্দ্রে থাকবে মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ সুরক্ষা। এটি কোনো কল্পনার স্বপ্ন নয়, বরং সময়ের দাবি। আর এই নতুন অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হবে সামাজিক ব্যবসা। তিনি বলেন, ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, বরং পরিবর্তন আনার জন্য বিদ্যমান। স্বাস্থ্যসেবা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা থেকে ক্রীড়া- সবক্ষেত্রেই সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করছে, লাভজনক থেকেও বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, বিগ ডাটা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশ্বকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারে। এগুলো যদি দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব। তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কল্পনা ও সৃজনশীলতাকে সোশ্যাল বিজনেসের দিকে চালিত করতে হবে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো সমস্যার টেকসই সমাধান নিহিত।
সবশেষে ড. ইউনূস বলেন, চলুন আমরা এমন এক নতুন তরঙ্গের স্থপতি হই, যেটি ন্যায়, স্থায়িত্ব ও আশার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। এমন এক পৃথিবী, যেখানে আমাদের যৌথ স্বপ্ন মানবজাতির জন্য এক নতুন ভোর নিয়ে আসবে।
বাংলাধারা/এসআর