জলবায়ু ঋণে জর্জরিত বাংলাদেশ, মাথাপিছু দায় ৮০ ডলার
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০৫:১৩ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
জলবায়ু অর্থায়নে অনুদানের চেয়ে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশকে গভীর সংকটে ফেলছে। বর্তমানে প্রতিটি ১ ডলার অনুদানের বিপরীতে বাংলাদেশ নিচ্ছে ২ দশমিক ৭ ডলার ঋণ। ফলে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ ডলার, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গড়ের তিনগুণ এবং বহুপাক্ষিক অর্থায়নে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, ঋণনির্ভর এই সহায়তা দেশের জলবায়ু নীতি ও রাজস্ব নীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সভায় জানানো হয়, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ বিশ্বের ৫৫টি স্বল্পোন্নত দেশের জলবায়ু ঋণ দায় সূচক তৈরি করেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় এই সূচক কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দায় মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও এর বিরূপ প্রভাবের ৭০ শতাংশই এ দেশগুলোকে বহন করতে হয়। জলবায়ু ফান্ড থেকে যে অর্থ আসে, তার ৯৫ শতাংশই ঋণ এবং মাত্র ৫ শতাংশ অনুদান। ফলে উন্নত দেশগুলোর দায়ভার ঋণের মাধ্যমে গরিব দেশগুলোকে বহন করতে হচ্ছে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশকে প্রতিবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গুনতে হচ্ছে ৭ বিলিয়ন ডলার। বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৭ বছর। তার মতে, বাংলাদেশের উচিত জলবায়ু আলোচনায় জীবনের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন ও পানির মতো বিষয়গুলোকে আলোচনার মূল এজেন্ডায় আনা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তিতে ঋণ মওকুফের দাবি জোরালো করা।
জাকির হোসেন আরও বলেন, এখনই বিশ্বব্যাংকসহ বহুপাক্ষিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে একটি আর্থ-সংহতি তহবিল (ফাইন্যান্সিয়াল সলিডারিটি ফান্ড) গঠন করতে হবে। দূষণকারীদের জন্য কার্বন ট্যাক্স ধার্য এবং জলবায়ু ফান্ডের নতুন উৎস খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে হবে।
সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “জলবায়ু খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও প্রতিশ্রুতি মিলছে মাত্র ৩০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির অর্থও বিতরণে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে বছরে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা নেমে এসেছে মাত্র ১০০ কোটিতে। তার দাবি, ফান্ডের টাকা অপচয় ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ফার্মার্স ব্যাংকে (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) ফান্ডের কয়েকশ কোটি টাকা অবৈধভাবে রাখার পর তা লোপাট হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদার। এসময় জলবায়ু ঋণ দায় সূচকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষক তন্ময় সাহা।
বাংলাধারা/এসআর