ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০৬:৪৮ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় নির্ধারিত সময় ১৭ অক্টোবর শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সকালে ইতালি সফর শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের একটি বৈঠকও করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সার্বিক প্রস্তুতি এবং বাস্তবায়ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বৈঠক করা হচ্ছে। বিকেলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠালেও চূড়ান্ত সনদের সঙ্গে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যুক্ত করা হয়নি। এ কারণে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল স্বাক্ষর না করার অবস্থান জানিয়েছে। আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) থেকে না সরায় বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ ও বাসদ (মার্কসবাদী)ও স্বাক্ষর করতে অনিচ্ছুক। গণফোরাম ও গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দলও সই না করার চিন্তাভাবনা করছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া না জানা পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। চূড়ান্ত সনদের সঙ্গে কমিশন সে সুপারিশ দেয়নি।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানায়, বাস্তবায়ন পদ্ধতি স্পষ্ট না হলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। মঙ্গলবার রাতে দলটির নেতাদের সঙ্গে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও এনসিপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, “সনদে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নেই। সংবিধান আদেশ জারি করে গণভোট ও সংসদে অনুমোদনের যে প্রস্তাব আলোচনায় হয়েছিল, সেটি বাদ গেছে। নিশ্চয়তা ছাড়া স্বাক্ষরের প্রশ্নই ওঠে না।”

সূত্র মতে, এনসিপি মনে করছে, এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছে। এবার তারা আর কোনো ছাড় দেবে না; বিশেষত সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন আলোচনা শুরু করাই তাদের দাবি।

ঐকমত্য কমিশন মঙ্গলবার রাতে যে সনদ প্রকাশ করেছে, তাতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের অংশটি বাদ দেওয়া হয়। পরিবর্তে যোগ করা হয়েছে, “গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।” এ পরিবর্তনে সন্তোষ প্রকাশ করলেও জামায়াতসহ কয়েকটি দল বলছে, নোট অব ডিসেন্ট মীমাংসা না হলে তারা সই করবে না।

সব মিলিয়ে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। আজ সন্ধ্যার বৈঠকেই নির্ধারিত হবে ১৭ অক্টোবরের অনুষ্ঠানে আদৌ স্বাক্ষর হবে কি না, নাকি আবারও নতুন সমঝোতার পথে হাঁটতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

বাংলাধারা/এসআর