ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২

শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে স্থবিরতা, আহত ২৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০৯:৪৬ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে টানা সাত ঘণ্টা বন্ধ ছিল উড়োজাহাজ ওঠানামা। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন লাগার পর বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে ফ্লাইট কার্যক্রম।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, শুরুতে পাঁচটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ায় একে একে ৩৭টি ইউনিট যুক্ত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশও সহায়তা করে। কার্গো ভিলেজের ভেতরের খোপখোপ জায়গা ও প্রবল বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ফায়ারফাইটিং রোবটও ব্যবহার করতে হয়।

অগ্নিনির্বাপণ অভিযানে অংশ নিয়ে আনসার ও এপিবিএনের অন্তত ২৭ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য বার্ন ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অন্তত ২৪টি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সূচি হঠাৎ পরিবর্তন করতে হয়। ঢাকায় নামার কথা ছিল এমন অনেক ফ্লাইটকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কলকাতাসহ বিকল্প বিমানবন্দরে নামানো হয়। শাহজালালে থাকা উড়োজাহাজগুলোও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কার্গো ভিলেজে থাকা ওষুধ, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিকস, মোবাইল ফোন, শিল্পকারখানার কাঁচামালসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্য পুড়ে গেছে। সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম বলেন, “তৈরি পোশাক ও ওষুধসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ভিলেজে ছিল, প্রায় সবই ভস্মীভূত হয়েছে।”

এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চিফ ফ্লাইট সেফটিকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, যাদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণে পৃথক তদন্ত কমিটি করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিমানবন্দরের আগুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহাম্মেদ খান বলেন, “কার্গো ভিলেজে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। শুরুতে কর্মীরা দেরিতে উদ্যোগ নেন। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে লোডাররা গেট ভেঙে পথ তৈরি করলে গাড়ি ঢুকতে পারে।

এর কয়েক দিন আগে মিরপুরের রূপনগরে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পরদিন চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি কারখানা পুড়ে যায়। একের পর এক বড় অগ্নিকাণ্ড জনমনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাধারা/এসআর