ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

না ফেরার দেশে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বব সিম্পসন

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১১:৪৮ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অনন্য নাম সাবেক অধিনায়ক ও প্রথম পূর্ণকালীন প্রধান কোচ বব সিম্পসন আর নেই। সিডনিতে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছে এই মহাতারকার মৃত্যুর খবর।

শুধু অসাধারণ ব্যাটার নন, সিম্পসন ছিলেন একাধারে দারুণ লেগস্পিনার, দুর্দান্ত স্লিপ ফিল্ডার এবং দলের সংস্কৃতি গড়ার স্থপতি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৬২ টেস্ট, যেখানে ব্যাট হাতে করেছেন ৪৬.৮১ গড়ে রান এবং বোলিংয়ে নিয়েছেন ৭১টি উইকেট। মাঠে তার নির্ভুল ক্যাচিং তাকে সময়ের সেরা স্লিপ ফিল্ডারদের একজন হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি সংগ্রহ করেছেন ২১ হাজারের বেশি রান ও নিয়েছেন ৩৪৯টি উইকেট।

১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও দেশের প্রয়োজনে ১৯৭৭ সালে আবারও ফিরতে হয় তাকে। ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের অস্থির সময়ে ৪১ বছর বয়সে পুনরায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে দশটি টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেন সিম্পসন। আশ্চর্যের বিষয়, তার করা সব ১০টি টেস্ট সেঞ্চুরি এসেছে অধিনায়ক হিসেবে। বিশেষভাবে স্মরণীয় ১৯৬৪ সালের ম্যানচেস্টার টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৩১১ রানের ইনিংস, যা আজও কিংবদন্তি হিসেবে বর্ণিত হয়।

কোচ হিসেবেও সিম্পসনের অবদান ছিল অমূল্য। ১৯৮৬ সালে ভরাডুবি সামলাতে দায়িত্ব নেন তিনি এবং অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের সঙ্গে গড়ে তোলেন কঠোর পরিশ্রম ও শৃঙ্খলানির্ভর দলীয় সংস্কৃতি। তার হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৭ বিশ্বকাপ জেতে, ১৯৮৯ সালে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে এবং ১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে পুনরায় বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তার কোচিংয়ের হাত ধরেই গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার সোনালী প্রজন্ম, শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়া, রিকি পন্টিং, ম্যাথু হেইডেনরা। শেন ওয়ার্ন পরে একাধিকবার বলেছেন, আধুনিক লেগস্পিনের সূক্ষ্ম কৌশল তিনি শিখেছিলেন সিম্পসনের কাছ থেকেই। ফিটনেস ও ফিল্ডিংয়ের ওপর তার জোর দেওয়ার কারণেই অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ফিল্ডিং সাইডে পরিণত হয়।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড বলেন, “বব সিম্পসন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম মহান এক কিংবদন্তি। তার অবদান, নেতৃত্ব ও দূরদর্শী কোচিং আমাদের সোনালী যুগের ভিত তৈরি করেছে।”

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেম ও আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত সিম্পসন ২০০৭ সালে ‘অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া’ সম্মাননায় ভূষিত হন।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আজকের আধিপত্য গড়ে উঠেছে, সেই ভিত্তির অন্যতম প্রধান নির্মাতা ছিলেন বব সিম্পসন। তার বিদায়ে ক্রিকেট হারালো এক দূরদর্শী নেতা, দক্ষ কোচ ও কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে।

বাংলাধারা/এসআর