নাহিদ ইসলামের হুঁশিয়ারি: গণতন্ত্র ব্যাহত করতে ‘আরেকটি এক-এগারোর’ ছক আঁকা হচ্ছে
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ১০:৪৮ রাত

ফাইল ছবি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটি এক-এগারোর মতো অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। শুক্রবার (২৩ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নাহিদ ইসলাম লেখেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিকে সকল প্রকার আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু বারবার এ জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, যাতে করে বাংলাদেশকে দুর্বল রাখা যায়।”
তিনি দাবি করেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর এখন দিল্লি থেকে নতুন করে ছক কাটা হচ্ছে—দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আরেকটি এক-এগারোর বন্দোবস্ত তৈরি করার জন্য। গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথকে রুদ্ধ করতেই এই পাঁয়তারা চলছে।”
নাহিদ তার বক্তব্যে দেশের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ এবং সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থি এবং ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সঙ্গে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার ও সৈনিকদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কার: জনগণকে দেওয়া সংস্কার, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে থেকেই সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র: নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে।
নির্বাচনসূচি: ঘোষিত টাইমফ্রেমের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
সংস্কারের রূপরেখা: নির্বাচনের পূর্বেই মৌলিক সংস্কারভিত্তিক জুলাই সনদ রচিত ও প্রকাশ করতে হবে।
জুলাই গণহত্যার বিচার: নির্বাচনের আগেই জুলাই গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে এবং সেই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।
নতুন সংবিধান: নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করতে হবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘এক-এগারো’ প্রসঙ্গটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, যেটি দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল। নাহিদ ইসলামের বক্তব্য সেই অতীত ঘটনার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করছে, যা আবারো রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্যকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাধারা/এসআর