ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নানা জটিল সমীকরণে অস্থির রাজনীতি, বাড়ছে অনৈক্য-বিভেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ১২:৪৫ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গণতন্ত্র প্রত্যাশী জনগণের আশাবাদ ছিল, এই সরকার বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তবে ১০ মাস পেরোতেই সরকারের অভ্যন্তরে অস্থিরতার সুর লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন ঘিরে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একইদিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।

এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের সংগঠন এনসিপির সঙ্গে জামায়াতেরও টানাপোড়েন চলছে। ছাত্রশিবিরের ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান ও জাতীয় সংগীতে বাধাদান নিয়ে এনসিপির সমালোচনার মুখে পড়ে জামায়াত। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টে এই সমালোচনার প্রতিফলন ঘটে, যা ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়। মাহফুজ আলম পরে ‘বিভাজনমূলক’ শব্দচয়ন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সকল শক্তিকে সম্মান জানিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

এদিকে এনসিপি নতুন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি তুলেছে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে তারা বিক্ষোভ করে। এনসিপির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বর্তমান কমিশনের ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জরুরি।”

অন্যদিকে, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ ও উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিও জানিয়েছে তারা।

রাজনৈতিক এই অস্থিরতায় সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতেও বিএনপির আন্দোলন চলছে, যদিও রিট খারিজের রায়ে সাময়িক বিরতি এসেছে।

একই সময়ে বৃষ্টি ও রাস্তায় জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরমে। গণঅধিকার পরিষদ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে— এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ, করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা, এবং শেখ হাসিনার সময় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকদের প্রত্যাহার।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বক্তব্যে বিএনপি ক্ষুব্ধ। রুহুল কবির রিজভী বলেন, “তারেক রহমানকে নির্বাসনের প্রসঙ্গ তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া, ও মিয়ানমারকে করিডোর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে স্পষ্ট সমাধান না এলে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বর ২০২৫ অথবা জুন ২০২৬ এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে বিএনপি তা ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টাই এখন প্রধান বাধা। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

সরকারের একটি অংশ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা চায়- এমন অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।


বাংলাধারা/এসআর