“জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের মূল্য এখন কোথায়?” ক্ষোভে কণ্ঠভেজা সোহেল রানার
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০১:৪৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু নিজের সবচেয়ে গর্বের পরিচয়টিই আজ তাঁর কাছে হয়ে উঠেছে একধরনের যন্ত্রণা ও হতাশার কারণ। বয়সের ভারে নত এই বর্ষীয়ান শিল্পী এখন কেবল প্রশ্ন রাখেন, “জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কী কাজে লাগছে? যেটা এক সময় ছিল সম্মানের প্রতীক, এখন সেটা যেন হয়ে গেছে অপ্রয়োজনীয় একটি পরিচয়পত্র।”
সম্প্রতি পাঁচ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে সোমবার সকালে ঘরে ফিরেছেন সোহেল রানা। শরীরের দুর্বলতা ও নানা জটিলতায় ক্লান্ত তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে বড় বেদনা বয়ে আনছে অবহেলার যন্ত্রণা, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে উপেক্ষিত হওয়ার অনুভূতি থেকে জন্ম নিচ্ছে।
এক জাতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের মূল্য এখন কোথায়? এখন যখন হাসপাতালে যাই, তখন তো আরও যত্নবান হওয়ার কথা ছিল। একটি রাষ্ট্রের কাছে মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কে হতে পারে? অথচ বাস্তবতা বলছে, আমরা যেন নিজের দেশেই অবহেলিত এক শ্রেণির মানুষ হয়ে গেছি।”
সোহেল রানা কেবল যুদ্ধ করেননি, স্বাধীনতার পর দেশীয় চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়কে তুলে ধরেছেন। ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমার প্রযোজক হিসেবে তিনি হয়ে উঠেছেন চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নাম। পর্দা কাঁপানো বহু সিনেমায় তিনি যেমন পেয়েছেন দর্শকের ভালোবাসা, তেমনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা।
তবুও মনে প্রশ্ন জাগে তাঁর,“আগামী ২০ বছর পর দেশে হয়তো কোনো মুক্তিযোদ্ধাই আর বেঁচে থাকবেন না। তখন কী মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাঠ্যবইয়ের পাতায় আর কিছু স্মৃতিফলকে সীমাবদ্ধ থাকবে?”
সোহেল রানার কণ্ঠে ক্ষোভ যেমন, তেমনি আছে গভীর বেদনা। তাঁর এ আত্মপ্রকাশ কেবল ব্যক্তিগত নয়—এটি আমাদের collective conscience-এর প্রতিধ্বনি। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহংকার, তাঁদের প্রাপ্য সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করাই কেবল ইতিহাস রক্ষা নয়, জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বাংলাধারা/এসআর