কড়াকড়ি অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে মুদ্রানীতি ঘোষণা
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৫:৩৭ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে আগের মতোই কড়াকড়ি অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকগণ।
মুদ্রানীতিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির গতি কিছুটা কমলেও তা এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও আমদানি ব্যয়ের চাপ মূল্যস্ফীতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তাই এই পরিস্থিতিতে সুদের হার কমানোর ঝুঁকি নিতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে এবং প্রকৃত সুদের হার ৩ শতাংশে পৌঁছায়, তখন নীতি সুদহার ধাপে ধাপে হ্রাস করা হতে পারে। তবে তার আগে পর্যন্ত বিদ্যমান হারই বজায় থাকবে।
নীতিনির্ধারকেরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে কোনো ধরনের শিথিলতা আনা হবে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) ১১.৫ শতাংশ এবং আমানতের সর্বনিম্ন হার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি) ৮ শতাংশেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এছাড়া মুদ্রানীতিতে ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় গৃহীত সংস্কার কর্মসূচির দিকেও আলোকপাত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তদারকি ব্যবস্থা, সম্পদের গুণগত পর্যালোচনা এবং আগামী জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (Risk-Based Supervision) চালুর উদ্যোগ।
রপ্তানি আয়ের ওপর বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে শুল্ক বাড়ার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা আনা হয়েছে। বর্তমানে দিনে দু’বার রেফারেন্স বিনিময় হার ঘোষণা করা হচ্ছে, যাতে মুদ্রাবাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। তবে অপ্রত্যাশিত অস্থিরতা ঠেকাতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করবে বলেও জানানো হয়েছে।
সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং ৬.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তাদের নীতিমালা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হলেও প্রয়োজনীয় কঠোরতা বজায় থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট, এই তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নীতিগত কৌশল নির্ধারণ করেছে।
নতুন মুদ্রানীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বচ্ছ, কার্যকর ও সহনশীল আর্থিক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাধারা/এসআর