২০১৮ সালের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদনের আদেশ স্থগিত
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ১১:০৪ দুপুর

ফাইল ছবি
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদন ও গ্রহণ করে ২০১৮ সালের আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতিও দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আদেশের ফলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হাইকোর্টে চলমান রিটের শুনানি নিষ্পত্তিতে আর কোনো আইনি বাধা রইল না বলে জানান রিভিউ আবেদনের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৬ জুন নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদন সংক্রান্ত গেজেট গ্রহণ করে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ যে আদেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হয়। সেই রিভিউয়ের রায় ঘোষণার জন্যই আজকের দিন ধার্য ছিল।
আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শুনানিকালে আদালতে বলেছি, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদনের যে প্রক্রিয়া হয়েছে, তা বিচার বিভাগকে ‘অ্যাসল্ট’ করার শামিল। এর আগে নয়জন বিচারপতি ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তৎকালীন সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা প্রণয়নের গেজেট প্রকাশে বাধ্য করেছিল। তাই দ্রুত এই বিষয়ে রিভিউ প্রয়োজন ছিল।”
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর ‘মাসদার হোসেন মামলা’তে আপিল বিভাগ ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দেন। ওই রায়ে বলা হয়-
১. সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব বিভাগের কাজ “সার্ভিস অব দ্য রিপাবলিক”-এর অন্তর্ভুক্ত হলেও বিচার বিভাগের কাঠামো এবং কাজের প্রকৃতিতে সিভিল সার্ভিসের থেকে ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একীভূত করা যাবে না।
২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না।
৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী একসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা সংবিধানবিরোধী।
৪. দ্রুত জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠন ও কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও ছুটি সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করবেন।
৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন গঠন করবেন।
৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে।
৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীন থাকবে না। বিচারকরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
৯. নিম্ন আদালতের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন ও বরাদ্দের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, নির্বাহী বিভাগের এতে কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন।
১১. বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। তবে আরও অর্থবহ পৃথকীকরণে প্রয়োজন হলে সংশোধন করা যেতে পারে।
১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন সুপারিশ না করা পর্যন্ত বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান বেতন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করবেন।
২০০৫ সালে এই রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা কার্যকরের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের গেজেট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষিতেই আজকের আপিল বিভাগের এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাধারা/এসআর