ঢাকা, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৬, ২০২৫, ০৫:৫৬ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

গাজা ‍সিটিতে মার্কিন ভিত্তিক এবং ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও চার হাজার ৮৯১ জন। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, মে মাসের শেষ দিক থেকে জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ শুরু করলেও, সংস্থার কেন্দ্রগুলোর কাছে একের পর এক হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, নিহতরা সবাই ক্ষুধার্ত মানুষ। তারা শুধুমাত্র খাবারের প্যাকেটের জন্য ত্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিল। গাজায় মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।”

এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে দাবি করে, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, অস্ত্রধারী কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রেই যা খুশি তাই করছেন।

তবে জিএইচএফ এপির প্রতিবেদন ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে আহত মজিদ আবু লাবান আল জাজিরাকে বলেন, “আমার সন্তানরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই বাধ্য হয়ে ওই ত্রাণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।”

এই ঘটনায় জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংস্থা জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সংস্থাটি মূলত ‘অমানবিক এবং প্রাণঘাতী সামরিকীকৃত কর্মসূচি’ পরিচালনা করছে এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ প্রশমনের জন্য একটি ‘মুখোশ’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অ্যামনেস্টির ভাষায়, “জিএইচএফ ইসরায়েলের গণহত্যার আরেকটি হাতিয়ার।”

এদিকে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় থামেনি হামলা। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা নগরীর কাছে তুফা এলাকায় তিনজন এবং দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন। এছাড়া, শনিবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে মধ্যস্থতাকারী কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনার মধ্যেও গাজায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে সহিংসতা এবং মানবিক বিপর্যয়।

 

বাংলাধারা/এসআর