তিন মন্ত্রণালয় ও ছয় দপ্তরে নেই সচিব, ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড
প্রকাশিত: জুলাই ০৭, ২০২৫, ০৪:৫৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি ছয়টি দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে সচিব নেই। ফলে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এসব জায়গায় আপাতত অতিরিক্ত সচিবরা রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সচিবের অনুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই ঝুলে আছে, ব্যাহত হচ্ছে নীতিনির্ধারণী কাজ।
ছয় মাস ধরে শূন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ
গত বছরের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এরপর ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে সেখানে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির মাত্র এক মাস নয় দিন পর, ২৯ ডিসেম্বর তাকে আবার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আর কোনো সচিব নেই। ছয় মাস ধরে সেখানে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চেয়ারম্যানের কাজ যেমন মেম্বার দিয়ে হয় না, তেমনি সচিবের কাজও কেবল রুটিন দায়িত্বে সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ঝুলে থাকে।”
সমবায় বিভাগেও তিন মাস ধরে শূন্যতা
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে গত ২৫ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর থেকে সমবায় বিভাগেও কোনো পূর্ণ সচিব নেই। অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেন রুটিন দায়িত্বে বিভাগ চালাচ্ছেন।
টেলিযোগাযোগ বিভাগে দুই মাস ধরে নেই সচিব
এপ্রিলের শেষ দিনে অবসর নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান। এরপর থেকে বিভাগটি সচিবশূন্য। দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রশাসনিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে সচিবের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। সচিব না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঝুলে আছে। আমরা চাই দ্রুত পূর্ণ সচিব নিয়োগ দেওয়া হোক।”
আরও ছয় দপ্তরে সচিব নেই
এই তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাইরে আরও ছয়টি দপ্তর সচিবশূন্য রয়েছে। সেগুলো হলো-
- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
- জাতীয় সংসদ সচিবালয়
- বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব)
- জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব)
- ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব)
- জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব)
গত ১৯ জুন একসঙ্গে চার সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তারা হলেন- বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক কাজী এনামুল হাসান, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইবরাহিম এবং জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মো. সহিদ উল্যাহ।
এছাড়া, ২৪ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার সুযোগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সচিবশূন্যতা দ্রুত দূর করতে কাজ চলছে। তবে এখনো কবে নাগাদ এসব পদ পূরণ হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই।
বাংলাধারা/এসআর