ঢাকা, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ বাংলাদেশি, আইএস তহবিলে অর্থ পাঠানোর অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৪, ২০২৫, ০৫:৪৯ বিকাল  

পুলিশ সদরদপ্তর বুকিত আমানে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আইজিপি মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল। ছবি: স্টার

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশি শ্রমিক সিরিয়া এবং বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)’ সংশ্লিষ্ট সেলগুলোতে অর্থ পাঠাত বলে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল।

আজ শুক্রবার বুকিত আমানে পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জানান, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক অভিযানে এসব বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত কারখানা, নির্মাণ এবং সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএসের হামলার পর থেকে মালয়েশিয়া নিরাপত্তা নজরদারি এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান জোরদার করে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট গ্রেপ্তারের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, এই ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

আইজিপি খালিদ ইসমাইল জানান, গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যে একটি চক্র গড়ে তুলেছিল, যারা আরও বাংলাদেশি শ্রমিকদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তারা ‘উগ্রবাদী মতাদর্শ’ ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

তিনি বলেন, “এই চক্র আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া এবং বাংলাদেশে আইএসের জন্য অর্থ পাঠাচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, তারা সদস্য ফি এবং চাঁদার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত। তবে মোট কত টাকা পাঠানো হয়েছে, তা এখনো তদন্তাধীন।”

মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার জানিয়েছে, ‘গেরাকান মিলিটান র‌্যাডিকাল বাংলাদেশ’ বা জিএমআরবি নামে পরিচিত এই চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্র মতাদর্শ প্রচার করছিল।

আইজিপি বলেন, “আমাদের ধারণা, তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৫০০ রিংগিত করে ফি দিতে হতো। তবে অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করত সদস্যদের আর্থিক সক্ষমতার ওপর।”

আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক কোনো আইএস সেলের সঙ্গে এই চক্রের সরাসরি যোগাযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, “এখনো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে মালয়েশিয়া পুলিশ এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের কার্যক্রম উন্মোচনে কাজ করছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ জনের মধ্যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশের হেফাজতে আছেন এবং তাদের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

খালিদ ইসমাইল বলেন, “যাদের সম্পৃক্ততা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে যারা বেশি সম্পৃক্ত, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এর আগে, গত ২৭ জুন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল জানিয়েছিলেন, এই বাংলাদেশিরা আইএসের মতাদর্শ মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দিতে এবং নিজেদের মধ্যে সদস্য নিয়োগের সেল গড়ে তুলতে সক্রিয় ছিল। তারা কেবল উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করছিল না, বরং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনাও করছিল।

এদিকে, ঢাকায় এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “তাদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করা হয়েছে, আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি মালয়েশিয়ার কাছ থেকে। আশা করছি, দুই-চার দিনের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে যে আসলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বাস্তবতা কতটুকু।”

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় করণীয় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “প্রথমেই দেখতে হবে, তারা সত্যিই কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কি না। যদি জড়িত প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেই উদ্যোগও নিতে হবে।”

মালয়েশিয়ায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। দেশটির বিভিন্ন শিল্প, নির্মাণ এবং কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট পূরণে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা বেশ গভীর। এই ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

 

বাংলাধারা/এসআর