ঢাকা, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির অভিযোগ: সাবেক নিরাপত্তা ঠিকাদারের চাঞ্চল্যকর বয়ান

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৪, ২০২৫, ০৩:৫৮ দুপুর  

গাজার একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সাবেক নিরাপত্তা ঠিকাদার বিবিসিকে জানিয়েছেন, একাধিকবার মেশিনগান দিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, যারা কোনো ধরনের হুমকির অংশ ছিলেন না। তিনি বলেন, “একবার একদল নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি মাত্র কিছুটা ধীরে চলায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে একজন প্রহরী মেশিনগান দিয়ে তাদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে।”

ত্রাণ বিতরণের এই কেন্দ্র পরিচালনাকারী সংগঠন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এ ধরনের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “জিএইচএফ-এর কোন বিতরণ কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিক কখনো গুলিবিদ্ধ হননি।”

মে মাসের শেষের দিকে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে সীমিত পরিসরে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে জিএইচএফ। এরপর গাজার ওপর ইসরায়েলি ১১ সপ্তাহের অবরোধ আরোপিত হয়, যার কারণে ওই এলাকায় খাবার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্যবস্থা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, কারণ এতে ক্ষুধার্ত হাজার হাজার মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে অল্প কয়েকটি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছতে বাধ্য করা হচ্ছিল।

জাতিসংঘ ও স্থানীয় চিকিৎসকদের তথ্য মতে, জিএইচএফ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের সময় প্রায় ৪০০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করে, এই ব্যবস্থা হামাসের সহযোগিতা বন্ধের জন্য নেয়া হয়েছে।

সাবেক ওই নিরাপত্তা ঠিকাদার বিবিসিকে আরও জানিয়েছেন, “একবার আমি দেখেছি, একজন ঠিকাদার জনতার ওপর বারবার ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে একজনকে গুলিবিদ্ধ করে ফেলে দেয়। সেখানে উপস্থিত অন্য একজন ঠিকাদার হাসতে হাসতে বলল, ‘ধুর, আমি ভাবছিলাম তুমি কাউকে মেরেছো।’”

তিনি বলেন, জিএইচএফ এর পরিচালকরা এই ঘটনা ‘কাকতালীয়’ বলে উড়িয়ে দেয় এবং বলেছে, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি ‘হোঁচট খেয়ে পড়েছিল’ অথবা ‘ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।’ তবে ওই ঠিকাদার দাবি করেন, তাকে ‘অসন্তুষ্ট সাবেক ঠিকাদার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বরখাস্ত করা হয়েছে - যা তিনি অস্বীকার করেন। বরখাস্তের পরও দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন তার বেতন স্লিপ দেখিয়েও তিনি এই দাবি সমর্থন করেন।

তিনি আরো বলেন, “ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে কোন কঠোর নিয়ম বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না, যা কার্যত দায়মুক্তির সুযোগ দেয়। একজন টিম লিডার বলেছিল, ‘যদি মনে করো কেউ হুমকি, তাহলে গুলি করো, পরে প্রশ্ন করো।’ সেখানে যা হয়, তাই নিয়ম।”

সাবেক ঠিকাদার জানিয়েছেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় সমস্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হলেও জিএইচএফ দাবি করে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, “ইসরায়েলি সেনারা গাজার বাসিন্দাদের ‘জম্বি’ বা ‘মৃত মানুষের দল’ বলে অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করে, যা তাদের প্রাণের কোনো মূল্য না থাকার ইঙ্গিত দেয়।”

তিনি আরও জানান, ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনিরা শারীরিকভাবে আহত হচ্ছেন অন্যভাবে - যেমন স্টান গ্রেনেডের ধ্বংসাবশেষ বা চাপাতারের ভিড়ে ঠেলে দেওয়া। একবার তিনি দেখেছেন, একজন পুরুষের মুখে পুরো ক্যান পিপার স্প্রে ঢেলে দেওয়া হয়, অন্য এক নারী স্টান গ্রেনেডের ধাতব অংশে গুরুতর আঘাত পায়, যা ভুলক্রমে ওই মানুষের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

সেই নারী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় এবং তিনি জানতেন না সে বেঁচে আছে কি না।

সপ্তাহের শুরুতে জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ১৭০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা ও এনজিও। অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়মিতভাবে সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা জিএইচএফ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হামাসের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে সরাসরি সাহায্য প্রদান করছে।

জিএইচএফ জানিয়েছে, মাত্র পাঁচ সপ্তাহে তারা ৫ কোটি ২০ লাখেরও বেশি খাবার সরবরাহ করেছে, যখন অন্য সংস্থাগুলো হামলায় তাদের সাহায্য লুট হওয়ার সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার ফলে প্রায় ১২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে গাজায় কমপক্ষে ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।

 

বাংলাধারা/এসআর