পেঁয়াজ উৎপাদনে নতুন উদ্যোগ, স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে দেশ
প্রকাশিত: জুলাই ০৬, ২০২৫, ১২:২৯ রাত

ছবি: সংগৃহিত
পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতা সামাল দিতে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে ৫০ টন উন্নতমানের পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের ডিএপি ও এমওপি সারও সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা হলেও কমে আসে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বছর আগেভাগেই কৃষকদের হাতে বীজ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফলে চাষাবাদে আর কোনো বিলম্ব হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনা উন্নতমানের এসব বীজ ইতিমধ্যে দেশের ৩৭টি উপজেলায় বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩টি উপজেলায়ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বীজ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। সব বীজ ইতিমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে এবং কাস্টমস ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সরাসরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবছরই পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে আলোচনার শেষ থাকে না। কখনো দাম বেড়ে যায়, কখনো আবার প্রণোদনার বীজ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গত বছরও প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা বীজ থেকে চারা না ওঠার অভিযোগ উঠেছিল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নতমানের বীজ আমদানি করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলন দিয়েছে এবং বাজারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
চলতি বছর সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, আধুনিক হিমাগার নির্মাণ, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং গ্রীষ্মকালীন উৎপাদনে গবেষণা জোরদার করা। তিনি বলেন, “কৃষক এবার সঠিক সময়ে বীজ হাতে পেয়েছেন। ফলে বীজ সংকট কিংবা অনিয়মের কোনো আশঙ্কা নেই। উৎপাদিত পেঁয়াজ সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে চার হাজার এয়ার-ফ্লো মেশিন বসানো হচ্ছে।”
প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন অন্ট্রাপ্রেনারশিপ রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ জানান, আগামী ১৫ জুলাই থেকে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি শুরু হবে এবং সেপ্টেম্বর নাগাদ ফসল তোলা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খান বলেন, “গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে দেশের চাহিদার বড় অংশ স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব। গ্রীষ্মকালে বাজারে পেঁয়াজের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ফলে কৃষকরাও বেশি লাভবান হবেন।”
সবমিলিয়ে সরকারি উদ্যোগ ও কৃষকদের আগ্রহ একত্রে কাজ করলে খুব বেশি সময় নয়, শিগগিরই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বাংলাদেশ। এতে দেশের পেঁয়াজ বাজার যেমন স্থিতিশীল থাকবে, তেমনি কৃষকও পাবেন ন্যায্য লাভ।
বাংলাধারা/এসআর