ঢাকা, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

কলম্বোয় আজ সিরিজে টিকে থাকার লড়াই

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৫, ২০২৫, ১০:৪৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন অনেক সময়েই নির্ধারিত ছকে গড়ে ওঠে। প্রতিপক্ষ নিয়ে সৌজন্য কথাবার্তা, সম্ভাবনা আর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের আলোচনা। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি সনাথ জয়াসুরিয়াও ব্যতিক্রম নন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, “ভালো খেললে বাংলাদেশের সুযোগ আছে সিরিজে ফিরতে। যে কোনো দলই, যে কোনো কন্ডিশনে জিততে পারে যদি ভালো খেলতে জানে।”

বাংলাদেশ যে ভালো খেলতে জানে না, তা অবশ্য জয়াসুরিয়া বলেননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে সত্যিই দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রায়ই কোনো ম্যাচে আংশিক ভালো খেলে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও সেই চিত্রই দেখা গেছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।

বোলিং-ফিল্ডিং মিলিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে আটকে রাখা গেছে, যা মোটেই খারাপ নয়। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। কিন্তু সেই ‘হঠাৎ ভুলে’ দ্রুতই রঙ চটে গেছে ইনিংসের। ক্রিকেটাররাও স্বীকার করছেন, প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স ছিল আংশিক ভালো। আর এমন ম্যাচ হারতে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হন সমর্থকরা।

আজ তাই লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের উচ্চাশা বেশি নেই। এক অর্থে চাপহীন ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে সোনার হরিণ হয়ে ওঠা এক জয়, যা সিরিজে ফিরতে বড় প্রেরণা হতে পারে।

প্রেমাদাসার উইকেট বরাবরই কিছুটা ধীরগতির। তবে জয়াসুরিয়ার মতে, কন্ডিশন ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ বলেন, “ব্যাটিংয়ের জন্য আউটফিল্ড ও পিচ ভালো ছিল। হ্যাঁ, গরম ও আর্দ্রতা কিছুটা সমস্যার কারণ হয়েছে। তবু আমরা ২৪৪ রান তুলতে পেরেছি।”

সাবেক ক্রিকেটারদের অভিমত, প্রেমাদাসার উইকেটে বুঝেশুনে খেলতে হয়। সেট হয়ে গেলে ইনিংস লম্বা করার কৌশল নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকে। প্রথম ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত রানআউট হওয়ার পর সেই দায়িত্বটা তানজিদ হাসান তামিমের নেওয়া উচিত ছিল।

এই প্রসঙ্গে গত দুই দিন ধরে বিস্তর আলোচনা হয়েছে টিম মিটিংয়ে। জাতীয় দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স ইংল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য উড়াল দেওয়ার আগে গেম প্ল্যান বুঝিয়ে গেছেন খেলোয়াড়দের। সংবাদ সম্মেলনে সেই কথাগুলোই তুললেন তামিম ইকবাল, “গেল ম্যাচ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কোচ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সবাইকে বলা হয়েছে, যে সেট হবে, তাকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। কারণ ওদের বোলাররা ভালো মানের। বিশেষ করে হাসারাঙ্গার বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটারদের বেশি খেলতে হবে। কারণ বাঁহাতিদের বিপক্ষে হাসারাঙ্গা ততটা কার্যকর নয়, যতটা ডানহাতিদের বিপক্ষে।”

বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অবস্থা বর্তমানে বেশ নাজুক। শেষবার জিতেছিল গত নভেম্বরে, শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তারপর টানা সাত ম্যাচে পরাজয়। র‌্যাঙ্কিংয়েও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০ থেকে ১১ নম্বরে নেমে যেতে সময় লাগবে না। মেহেদী মিরাজরা জানেন, এই সিরিজেই ছন্দে না ফিরলে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার স্বপ্ন আরও দূরে সরে যেতে পারে।

তামিমও জানালেন সেই বাস্তবতার কথা, “এখনো সিরিজে দুই ম্যাচ বাকি। আমরা শুধুই সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। সিরিজে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেই থাকছেন না তাসকিন আহমেদ। গোড়ালির চোটের কারণে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় দল সূত্রে জানা গেছে, তাসকিন শেষ ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবেন। তাঁর জায়গায় হাসান মাহমুদ বা নাহিদ রানার মধ্যে যে কোনো একজনকে খেলানোর সম্ভাবনা রয়েছে। দুই পেসার খেললে স্পিনার একজন বাড়ানোর কথা ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের সঙ্গে বাঁহাতি তানভীর ইসলামকেও রাখা হতে পারে, যদিও অভিষেক ম্যাচে তানভীর তেমন ভালো করতে পারেননি।

অন্যদিকে, মেহেদী মিরাজের বোলিংয়েও ধার কমেছে। টানা পাঁচ ম্যাচে তিনি উইকেটশূন্য। তাই লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় পেতে হলে অধিনায়ক মিরাজ ও তাঁর দলকে খেলতে হবে আক্রমণাত্মক, নির্ভীক ক্রিকেট। না হলে আবারও পরাজয়ের বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে হতে পারে টাইগারদের।

তবু, সব নেতিবাচকতার মাঝেও আশার প্রদীপ নিভে যায়নি। মিরাজদের আশ্রয় সেই চিরপরিচিত বিশ্বাসে- যে কোনো দিনই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আজ কলম্বোয় সেই সম্ভাবনাই খুঁজছে বাংলাদেশ।

 

বাংলাধারা/এসআর