বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না: আসাদুজ্জামান রিপন
প্রকাশিত: জুলাই ০৪, ২০২৫, ০৩:০৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, “যে দল জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেই দল ইতিহাস থেকেই মুছে যায়। আওয়ামী লীগও সেই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে।”
শুক্রবার (৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতীকী তারুণ্য সমাবেশে এসব মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশটির প্রতিপাদ্য ছিল, 'সারাদেশে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি'।
ড. রিপন বলেন, “আওয়ামী লীগ ভুল রাজনীতির পথে হেঁটেছে। তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে, জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও। তাই বলছি- এই রাজনৈতিক দলটি বিলুপ্তির পথেই হাঁটছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে 'আওয়ামী লীগ' নামে কোনো রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্ব থাকবে না।”
রিপন বলেন, “এটা কোনো নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয় নয়। তাদের কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে-জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি এ দেশে আর ফিরবে না।”
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমরা ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। এ বিজয় এসেছে দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল হিসেবে। এই বিজয়ের মূল লক্ষ্য ছিল- শোষণমুক্ত, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক একটি বাংলাদেশ গঠন। যেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা এমপি-মন্ত্রীরা নিজেদের মোগল সম্রাট মনে না করেন।”
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৪ হাজার টাকা বেতন পেয়ে কেউ কীভাবে ঢাকায় দুইটি বাড়ির মালিক হন? বিদেশে সন্তানদের পড়ান? দুর্নীতির মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হলেও, এই দুর্নীতিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কখনো কোনো রাজনীতিবিদ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হলে আমরা সমালোচনা করি, কিন্তু একজন কর্মকর্তা ঘুষ খেলে তাকেও একইভাবে প্রশ্ন করা উচিত- আপনি ‘মহাচোর’, এটা বলা যাবে না কেন?”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। এসব নির্বাচনে ডিসি, এসপি, ইউএনওরা রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। অথচ তারাই এখন প্রশাসনের উচ্চ পদে আছেন, কেউ কেউ প্রমোশনের আশায় ছুটছেন। এই আমলাদের বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত না করলে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।”
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, “যেসব আমলা অতীতে বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছেন- তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের অভাব নেই, সমস্যা হলো সৎ লোককে সুযোগ না দেওয়া।”
ড. রিপন বলেন, “অনেকেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্তু বিএনপি অনেক সময় বলে না- ২০০৮ সালের নির্বাচনও ছিল এক মহা-ডিজাইন। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১/১১-এর পরাজিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করা এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘকালীন অবৈধ শাসনের পথ সুগম করা।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও সচিবালয়ে যারা আওয়ামীপন্থি হয়ে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছে, যারা ভোট ডাকাতিতে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বিদায় করতে হবে। এর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটন। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু এবং রাজনীতিক রহিমা শিকদার।
বাংলাধারা/এসআর