ঢাকা, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলার অপপ্রচার চলছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৬, ২০২৫, ০৫:৫১ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ দল হিসেবে চিত্রিত করতে একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তি বিএনপির সংস্কার নিয়ে নানা কথা বলছেন, যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির কমিটমেন্ট টু রিফর্মস… এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি সেই দল, যে দল ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ প্রস্তাব করেছে, যেখানে সংস্কারের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল। এরপর ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আন্তরিক বলেই এই ৩১ দফা নিয়ে দেশব্যাপী অসংখ্য কর্মসূচি করেছি, জনগণ, সুধী সমাজ ও সুশীল সমাজের কাছে গিয়েছি।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আজ একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে প্রচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ১৫ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির যে দৃঢ় অবস্থান, তা সবারই জানা। আমাদের কত সমাবেশ, কত কর্মসূচি, কত লাঠিপেটা আপনারা দেখেছেন, কাভার করেছেন। এখন বিএনপিকে নিয়ে এই প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে? এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া আর কী বলব?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটি গোষ্ঠী বিএনপিকে মেলাইন বা ভুলভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। কয়েকজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন, মনে করছেন জনগণ সাড়া দিচ্ছে। আসলে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। জনগণ বলতে কয়েকজন শহুরে মানুষ নয়, জনগণ মানে পুরো বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংস্কার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্র এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে তিনটি নির্বাচন আয়োজন—সবই বিএনপির অবদান। “মুক্ত বাজার অর্থনীতি, বেসরকারি খাতের প্রসার, ইমার্জিং টাইগার হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি—এসবই বিএনপির সময়ের সংস্কারের ফসল। এমনকি ভ্যাট প্রথা চালু করার সময়ও আমাদের কত সমালোচনা শুনতে হয়েছে,” বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, “এসব অর্জন ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিএনপিকে নিয়ে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। এতে কোনো লাভ হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চেনে। দেশের ভালো যে কোনো অর্জনের পেছনে বিএনপির ভূমিকা রয়েছে।”

‘যারা নির্বাচন বিলম্বিত চায়, তারা গণতন্ত্রের শক্তি নয়’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষেরও শক্তি নয়।”

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, দেশে যেন আর কোনো স্বৈরাচার না জন্মায় বা ফ্যাসিজমের কোনো সুযোগ তৈরি না হয়, সেজন্য বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল না থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ-নির্বাহী বিভাগের কার্যকারিতা বজায় রাখার স্বার্থে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা বডি সৃষ্টি করা উচিত নয়, যা প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড ব্যাহত করতে পারে। তাই জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। এটাই আমাদের শর্ত।”

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “তবে আমরা আশাবাদী। আলাপ-আলোচনা চলছে। দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।”


বাংলাধারা/এসআর