ঢাকা, রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

দুই বছরেও নিবন্ধন পায়নি এক হাজার নতুন ওষুধ, দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ০২, ২০২৫, ১১:৩২ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

নতুন এক হাজার ওষুধ নিবন্ধনের জন্য দুই বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে দেশের ওষুধ খাত। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আটকে থাকা এসব ওষুধ যদি চলতি বছরের নভেম্বরের আগেই নিবন্ধন না পায়, তাহলে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে, যা ওষুধের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন, ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, রেনাটার সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান এবং সমিতির সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সভায় বলা হয়, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এরপর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ট্রিপস চুক্তি পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে রয়্যালটি গুনতে হবে বা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে ওষুধের পেটেন্ট নিতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অনেক সময়সাপেক্ষ।

ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, “যত দ্রুত নতুন ওষুধগুলোর নিবন্ধন দেওয়া যায়, তত ভালো। তা না হলে নভেম্বরের পর থেকেই এদের পেটেন্ট ফি ও রয়্যালটি দিতে হবে। এতে বাজারে ওষুধের দাম বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”

রেনাটার সিইও সৈয়দ কায়সার কবির বলেন, “শুধু ওষুধ শিল্প নয়, গোটা দেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। ট্রিপস সুবিধা হারালে ওষুধ পেটেন্টে ছাড় মিলবে না, বিদেশি ঋণ পেতে কড়াকড়ি বাড়বে। তাই ২০২৬ সালের গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমরা।”

সভায় জানানো হয়, কম্বোডিয়া ও সেনেগাল তাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে ধীরগতির কৌশল গ্রহণ করায় আরও কিছু সময় এলডিসি সুবিধা পেয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন।

এছাড়া দেশের ওষুধ শিল্পের মূল কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে গঠিত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘এপিআই শিল্পপার্ক’ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় সভায়। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে ২৭টি কোম্পানিকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান সেখানে উৎপাদন শুরু করেছে।

ডা. জাকির হোসেন বলেন, “এপিআই পার্কে প্লটের আকার ছোট, গ্যাস সরবরাহ নেই, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনও অপূর্ণ। ফলে বিদেশি প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, সরকার কিছু নীতিমালা সংশোধন করেছে এবং বর্তমানে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করতে পারবে।

এদিকে, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই টাস্কফোর্স ওষুধের তালিকা নির্ধারণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একদিকে জনগণের ওষুধপ্রাপ্তি ব্যাহত হবে, অন্যদিকে ওষুধ শিল্প বড় সংকটে পড়বে। তাই অবিলম্বে ওষুধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সময় চাওয়ার কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি।

বাংলাধারা/এসআর