ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ০৭, ২০২৫, ১০:২৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আশুলিয়ায় ছয় জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট)। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়েছে।

এর আগে, গত ২৮ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠনের জন্য আজকের দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনাল। নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী সকালেই আলোচিত মামলার আটজন আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় গত ১৯ জুন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষ করে তা প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় একজন গুরুতর আহত হন। পরে নিহত পাঁচজন ও আহত ব্যক্তিকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাদেরকে একটি গাড়িতে তোলা হয় এবং সেখানেই পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মর্মান্তিকভাবে ছয়জনই আগুনে পুড়ে মারা যান, এদের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিলেন বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে: সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন। অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

ছাত্র আন্দোলনের ‘বিজয়ের দিন’ হিসেবে পরিচিত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অন্তত ৩১ জন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যান। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাভার ও আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৭৫ জনে দাঁড়ায়।

এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়—পুলিশ সদস্যরা গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের হাত-পা ধরে একটি ভ্যানে ফেলে দিচ্ছেন। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে শেষদিকে একটি ব্যানার দিয়ে লাশ ঢেকে দেওয়া হয়। ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডের সময় একটি নির্বাচনী পোস্টারও দেখা যায়, যা ধামসোনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আবুল হোসেনের। এ থেকেই স্পষ্ট হয় ঘটনাস্থল ছিল আশুলিয়া থানার আশপাশেই।

ভাইরাল হওয়া সেই হৃদয়বিদারক ভিডিও এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ জমা পড়ে। পরে দুটি অভিযোগকে একত্র করে একটি মামলা হিসেবে গৃহীত হয়।

এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এক ভয়াবহ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক অধ্যায়। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এই ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে একটি দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

বাংলাধারা/এসআর