ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

সাংবাদিক সুরক্ষায় অধ্যাদেশ

সাংবাদিক নির্যাতনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৯:৪৫ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধে দোষী ব্যক্তিকে মাত্রা অনুযায়ী ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ন্যূনতম এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। এই বিধান রেখে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা প্রায়ই সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে অধ্যাদেশের একটি খসড়া তৈরি করে সরকারকে প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবই মন্ত্রণালয় আমলে নিয়ে চূড়ান্ত করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সোলেমান আলী জানিয়েছেন, খসড়াটি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর এতে আরও সংশোধন আনা হবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সাংবাদিককে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি থেকে সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সাংবাদিকের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাবে না। জনস্বার্থে তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশের কারণে সাংবাদিক যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানও সাংবাদিককে ভয়ভীতি বা চাপের মুখে ফেলতে পারবে না।

আইনের ৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, সাংবাদিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা অবৈধ তল্লাশি ও সম্পদ জব্দ করা যাবে না। শারীরিক বা মানসিক চাপ প্রয়োগ করে তথ্যসূত্র প্রকাশে বাধ্য করাও নিষিদ্ধ। এছাড়া সাংবাদিক যেন নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে ও ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিক ও ব্যবস্থাপনার। এই শর্ত ভঙ্গ হলে সাংবাদিক কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশের কারণে কারও ক্ষতি হলে, ভিন্ন উদ্দেশ্য প্রমাণিত না হলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। সহিংসতার শিকার হলে সাংবাদিক আদালতে লিখিত বা অনলাইনে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ পাওয়ার পর আদালত পুলিশ সুপারকে মামলা নিতে নির্দেশ দেবেন এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে হবে।

সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানিতে দোষী প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। এই জরিমানা ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাংবাদিককে প্রদান করা যাবে। সহিংসতার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে ভয়ভীতি, হয়রানি, অপমান, নজরদারি, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, অবৈধ আটক, গুম ও অপহরণ।

আইনের ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সাংবাদিক যদি জেনে-শুনে মিথ্যা অভিযোগ করেন, তাহলে তাঁর সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। আর যদি কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তবে এর বিনিয়োগকারী, পরিচালক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়ী ধরা হবে, যদি না তারা প্রমাণ করতে পারেন যে ঘটনাটি তাদের অজ্ঞাতসারে ঘটেছে বা তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।

বাংলাধারা/এসআর