২৬০ ওষুধের দাম বেঁধে দিচ্ছে সরকার
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৯:৪৬ সকাল

ছবি: সংগৃহিত
সরকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এবার ২৬০টি ওষুধের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে পারেন। এ লক্ষ্যে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। সেখানে ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা এবং উৎপাদকদের ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অতীতে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অভাবে তা সফল হয়নি। এবার শক্তিশালী জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব উঠেছে, যার প্রধান হবেন মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রক্রিয়াটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ সহযোগিতা করছে। তবে টাস্কফোর্সে উৎপাদকদের প্রতিনিধি না রাখায় ওষুধ শিল্প মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিকায়ন খরচ বিবেচনায় না নিলে সঠিক মূল্য নির্ধারণ সম্ভব হবে না এবং এতে চিকিৎসক, রোগী ও প্রস্তুতকারক, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশই ওষুধের পেছনে যায়, যেখানে বৈশ্বিক গড় মাত্র ১৫ শতাংশ। ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে ২০২২ সালে প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। ২০১৬ সালে ২৮৬টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা থাকলেও মাত্র ১১৭টির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ নয় বছর কার্যকর কোনো তদারকি হয়নি।
এবারের উদ্যোগ নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, ২৬০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বেঁধে দেওয়া হবে এবং মাঠ পর্যায়ে তা কার্যকর হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত তদারকি করা হবে। ডব্লিউএইচওর একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই ঢাকায় এসে প্রক্রিয়ায় পরামর্শ দেবে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক তদারকি ও আইনি কাঠামোর আওতায় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে পারলে চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
ওষুধ শিল্প নিয়ে সমালোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উৎপাদকদের বাদ দিয়ে কোনো নীতিমালা প্রণয়ন গ্রহণযোগ্য নয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বাস্তবতা মাথায় রেখে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে ওষুধ শিল্প ঝুঁকির মুখে পড়বে।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে আলাদা ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটি এক মাসের মধ্যে কৌশলগত নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দেবে। এতে কাঁচামাল উৎপাদন বাড়ানো, শুল্কনীতি সহজীকরণ, রপ্তানি সহায়তা ও প্রণোদনা কাঠামো তৈরিসহ নানা সুপারিশ থাকবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সরকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং কাঁচামাল উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের বড় সংস্কারে এগোচ্ছে। তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে উৎপাদকদের সম্পৃক্ত করা এবং কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বাংলাধারা/এসআর