ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

লোকসানের আশঙ্কায় থমকে গেল ইলিশ রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০৮:৩৭ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রপ্তানি শুরুর প্রথম দিন কিছুটা সরব থাকলেও পরদিন থেকেই রপ্তানিকারকরা ইলিশ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারে চড়া দামে ইলিশ কিনে সরকার নির্ধারিত কম দামে রপ্তানি করলে বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সরকার দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি রপ্তানি দর নির্ধারণ করেছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৫২৫ টাকা। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের হিসাব বলছে, ৬০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশের পাইকারি দর এখন দুই হাজার টাকার ওপরে। এক কেজি বা তার বেশি হলে দাম ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। তার সঙ্গে প্যাকেটিং ও পরিবহন খরচ যোগ হলে কেজিপ্রতি ১০০–১৩০ টাকা বাড়ছে। ফলে নির্ধারিত দরে রপ্তানি করলে বড় ধরনের লোকসান হচ্ছে।

এ কারণে রপ্তানি অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ইলিশ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরিশালের পোর্ট রোড, বরগুনার পাথরঘাটা ও পাবনার মোকামেও একই চিত্র। অনেক প্রতিষ্ঠান বেনাপোলে অপেক্ষমাণ ট্রাক ভর্তি ইলিশ ফের দেশের বাজারেই বিক্রি করে দিয়েছে।

রপ্তানিকারকরা মাছ না কেনায় শুক্রবার পাইকারি মোকামে দাম কিছুটা কমেছে। বরিশালের পোর্ট রোড মোকামে ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১ হাজার ৮৮০ টাকায়, যা রপ্তানির প্রথম দিন ছিল ২ হাজার টাকা। এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২ হাজার ১৫০ টাকায়, যা আগের চেয়ে কেজিতে ৫০ টাকা কম। তবে খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে প্রচুর ইলিশ ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে ভারতের বাজারে এখন ইলিশের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় সেখানকার আমদানিকারকদের মধ্যে আগ্রহ কমে গেছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম আকন্দ জানান, এ বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ তুলনামূলক কম। মৌসুমের শুরু থেকেই দাম অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও আশ্বিন মাসের অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সব মিলিয়ে সরকার রপ্তানির অনুমোদন দিলেও লোকসান, ভারতীয় বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে এ বছর ইলিশ রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাধারা/এসআর