ঢাকা, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১০:১৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় হেফাজতে থাকা সাবেক ও বর্তমান ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, “তাদের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া চলছে। আদালত আজ আদেশ দিয়েছেন, যারা সেনা হেফাজতে আছেন, তাদের সবাইকে এখন থেকে কারাগারে রাখা হবে।”

এর আগে সকাল সোয়া ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় মোট ৩২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন, বাকিরা পলাতক।

তিন মামলার মধ্যে দুটি মামলা করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। অন্যটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা নিয়ে।

গুম-নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর একটিতে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)।

এছাড়া র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেমও বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন।

অন্যদিকে এই মামলার পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক- বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ। একই মামলায় পলাতক আছেন শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং র‍্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

অন্যদিকে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত সেনা হেফাজতে আছেন, অন্য দুজন পলাতক।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, এসব মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার প্রত্যাশায় ছিলেন। আজকের নির্দেশ সেই পথে একটি বড় পদক্ষেপ।”

বাংলাধারা/এসআর