ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা কারাগারে, নিরাপত্তা জোরদার পুরো রাজধানীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১০:২৪ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ নির্দেশ দেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সকালের শুরু থেকেই রাজধানীর কাকরাইল ও ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। সকাল সোয়া ৭টার দিকে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি সবুজ রঙের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়।

দিনের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল মোট ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “এই কর্মকর্তাদের কোন কারাগারে রাখা হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।”

ট্রাইব্যুনালে বুধবার তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এসব মামলায় মোট ৩২ জন অভিযুক্ত রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

যেসব কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে)।

এছাড়া র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলমও এ তালিকায় আছেন।

এছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকীকেও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ঘিরে সকাল থেকেই কাকরাইল, পল্টন, মৎস্য ভবন ও হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা সদস্যদেরও মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাগুলো মূলত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম, নির্যাতন ও রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ থেকে উদ্ভূত। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এসব মামলায়।

বাংলাধারা/এসআর