ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

শিশু আছিয়া হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

মাগুরা, বাংলাধারা

 প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১২:৫৫ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

মাত্র ৮ বছর বয়সে নৃশংসতার শিকার হওয়া শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৭ মে দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই দিন ধার্য করেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্মরণ করা যায়, ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে এক নির্মম ঘটনার শিকার হয় শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আছিয়া। প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, পরে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

ঘটনার তিন দিন পর, ৮ মার্চ, আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। অভিযুক্তরা হলেন- বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, বোন জামাই সজিব শেখ ও তার বড় ভাই রাতুল শেখ। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে চারজনকেই গ্রেপ্তার করে এবং বর্তমানে তারা বিচারিক হেফাজতে রয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন ১৩ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এরপর ২০ এপ্রিল মামলাটি আমলে নিয়ে ২৩ এপ্রিল চার্জ গঠনের দিন ধার্য করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৭ এপ্রিল, যা শেষ হয় ৭ মে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুই চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে।

এদিকে মামলার মূল অভিযুক্ত হিটু শেখ আদালতে একাধিকবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও ১৫ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তবুও বারবার সংবাদকর্মীদের সামনে এসে শিশুটির বোন হামিদাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করে আসছিলেন তিনি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

আছিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মাগুরা শহরে সড়ক অবরোধ, থানা ঘেরাও, আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থানসহ একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়। সর্বস্তরের মানুষ এক কণ্ঠে দাবি তোলে- এই জঘন্য অপরাধের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার।

স্থানীয় আইনজীবীরা অভিযুক্তদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন। সরকারের পক্ষ থেকেও মামলাটি বিশেষ গুরুত্বে নিয়ে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করতে নিযুক্ত করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাডভাইজার এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে। অপরদিকে আসামিপক্ষকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আইনজীবী সোহেল আহমেদ নিযুক্ত করেন আদালত।

মামলাটির প্রতিটি ধাপে দেশের মানুষ চোখ রেখেছে আদালতের দিকে। একটি নিষ্পাপ শিশুর জন্য বিচার পাওয়ার লড়াই যেন আজ গোটা জাতির বিবেকের পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

১৭ মে- এই দিনটিকে ঘিরে তাই শুধু একটি মামলার রায় নয়, অপেক্ষা করছে একটি সমাজ, একটি প্রজন্ম-ন্যায়ের জয় দেখার জন্য।


বাংলাধারা/এসআর