ঢাকা, রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

মাটিরাঙায় থেমে থেমে টানা ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর

আবু রাসেল সুমন  জেলা প্রতিনিধি :খাগড়াছড়ি 

 প্রকাশিত: আগস্ট ০৩, ২০২৫, ০৫:১৬ বিকাল  

মৌসুমী বাযুর প্রভাবে থেমে থেমে টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় একাধিক স্থানে পাহাড় ধসে 
অনেক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রবিবার ( ৩ আগষ্ট ) মাটিরাঙা পৌরসভা এলাকার
বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে বসতবাড়িসহ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ভারী বর্ষণের ফলে মাটিরাঙার বৌদ্ধমন্দির পাড়া,চরপাড়া,চক্র পাড়া,ওয়াসু, মোহাম্মদপুর,মেস্তরী পাড়া, বলিপাড়া ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি 
বিধ্বস্ত এবং রাস্তাঘাট ভেঙে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও  ভারী মাত্রার বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তবে কোন জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

মাঝারী ও ভারী বর্ষণের ফলে বসতবাড়ী,গোয়ালঘর,
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। তাছাড়া চলাচল রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বর্ষা মৌসুমে বাবুপাড়া এলাকার বৌদ্ধমন্দির পাড়ার একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি ভেঙে যায়।এলাকাবাসীর উদ্যােগে সামান্য চলাচলের উপযোগী করে তোলা হলেও পৌরসভা কিংবা সরকারি ভাবে এর কোন যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন করেনি কতৃপক্ষ। যার ফলে এখন পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। 

পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড মন্দির পাড়ায় বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্ত রিপ্রোচাই মারমার স্ত্রী পাইচাইং মারমা বলেন,গতবছর ধলিয়া খালের প্রবল স্রোতে পাহাড়ের একাংশ ভেঙে গেছে। এবছর আমার গোয়ালঘর পুরোটাই ভেঙে খালে চলে গেছে। এখন আমার থাকার একমাত্র ঘরটি নিয়েও শংকায় আছি। দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এর ব্যবস্হা গ্রহন করার জন্য দাবী জানাচ্ছি। 

বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি জেনেও এসব এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটছে।

এদিকে বন্যা, ভূমি ও পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে সতর্ক করছেন  সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। তারা এলাকায় গিয়ে সতর্কতামূলক প্রচারাভিযান চালাছেন। 

এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বর্ষায় আরও অনেকের ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। প্রাণহানির শঙ্কায় অতি ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে প্রশাসন। ঝুঁকিতে থাকা সেসব পরিবারদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হচ্ছে।

মাটিরাঙা পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিনিধি আলী আশ্রাফ জানান, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, পাহাড় ধসের শঙ্কা বাড়ছে। অনেকে পাহাড়ের উপরে ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। প্রাণহানি এড়াতে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার উদ্যোগ নেয়ার হয়েছে। বর্ষা শেষ হলেই ভেঙে যাওয়া রাস্তায় মাটি ভরাট করে মেরামতের উদ্যােগ নেয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,মাটিরাঙায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করা তিনটি ক্ষতি গ্রস্ত পরিবার থেকে সাহায়্য পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে । বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যারা তাদের জন্য অর্থ ও চাল ডাল তৈলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেবের ব্যবস্হা  করা হয়েছে। 

তবে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তৎপর হয় প্রশাসন। কিন্তু এরপর নিরব। স্থানীয়রা চান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী পরিবারগুলোকে স্থায়ী পুনর্বাসন।

মাটিরাঙা উপজেলা জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আলম জানান, পরিস্থিতি যদি আরো অবনতি ঘটে বা পাহাড় ধসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং দুর্যোগ কবলিতদের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে  উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে প্রাণহানির ঝুঁকি  এড়াতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য খাবার ও ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।