২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি চূড়ান্ত: যোগাযোগ-বিদ্যুৎ-শিক্ষায় বরাদ্দে জোর
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৪:০৫ দুপুর

ছবি: পিআইডি
অবশেষে চূড়ান্ত হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। পরিকল্পনা কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে মূল এডিপির তুলনায় তা ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।
রোববার (১৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এডিপির এই খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এডিপির মোট ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এডিপিতে মোট ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটেও আগের ধারাবাহিকতায় পাঁচটি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেখানে মোট এডিপির প্রায় ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত—যেখানে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৫.৬৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে—৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা (১৪.০৮ শতাংশ)। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা খাত, যেখানে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা (১২.৪২ শতাংশ)। এছাড়া গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা (৯.৯০ শতাংশ), আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা (৭.৮৯ শতাংশ)।
অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। কৃষি খাতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৫ হাজার ৩৮ কোটি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২ হাজার ১৮ কোটি, সাধারণ সরকারি সেবায় ১ হাজার ৮৭৭ কোটি এবং প্রতিরক্ষা খাতে ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বছর শেষে তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। তুলনামূলকভাবে আগামী অর্থবছরের এডিপি কিছুটা সংকুচিত হলেও বাস্তবায়নের সক্ষমতা, বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
এছাড়া জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো থেকে মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকার এডিপি চাহিদা জানানো হয়েছিল। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অগ্রাধিকার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের বাস্তব চিত্র বিবেচনায় নিয়ে তা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
এডিপির কাঠামোয় পরিবর্তন এনে পরিকল্পনা কমিশন এবার অধিক কার্যকর ও বাস্তবসম্মত প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে অগ্রগতি নেই কিংবা দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে, সেগুলো বাছাই করে নতুনভাবে যাচাইয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
উন্নয়ন বাজেটকে কার্যকর, লক্ষ্যভিত্তিক ও ফলপ্রসূ করে তোলাই এখন সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবায়ন কাঠামো আরও শক্তিশালী করা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দিকে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা।
বাংলাধারা/এসআর