ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘কেন গেলেন ধানমন্ডি থানায়?’ - এনসিপির শোকজ নোটিশে হান্নান মাসউদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর  

ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে দলটি। ধানমন্ডি থানায় গিয়ে দলীয়ভাবে বহিষ্কৃত তিনজনকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এ নোটিশ জারি করা হয়েছে।

এনসিপির দপ্তর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত নোটিশে হান্নান মাসউদকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে- কেন তিনি থানা থেকে বিতর্কিত তিন নেতাকর্মীকে ছাড়িয়ে আনলেন এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সেই যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।

গত সোমবার (১৯ মে) রাতে ধানমন্ডি থানার আওতাভুক্ত একটি আবাসিক এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তারা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর কর্মী বলে পরিচিত হলেও, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে এদের অন্যতম- মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি, নৈতিকতা প্রশ্নে আগেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

তবে এই বহিষ্কারের পরও, পরদিন মঙ্গলবার (২০ মে) হান্নান মাসউদ থানায় গিয়ে আটক তিনজনের পক্ষে মুচলেকা দিয়ে তাদের জামিনে মুক্ত করান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে প্রশ্ন তোলেন- ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেই কি তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন, নাকি দলের বাইরে গিয়ে নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন?

আটকের আগের মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে এক তরুণকে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়- “আপনি ওসি হয়ে কেন কিছু বলছেন না? আমি বলছি, আপনি গ্রেপ্তার করেন।” এই ঘটনার পর পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনজনকে হেফাজতে নেয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর আগে সংগঠনের নীতিবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাই তাদের পক্ষে গিয়ে থানায় উপস্থিত হওয়া এবং জামিনের উদ্যোগ নেয়া সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।

এনসিপির ভাষ্য অনুযায়ী, “দলের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে বহিষ্কৃতদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতৃত্বের নৈতিক প্রশ্ন তোলে।”

হান্নান মাসউদকে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার পেছনে একটি বড় রাজনৈতিক চালের গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সোমবারের ঘটনার পেছনে একটি বিশেষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান- হাক্কানী পাবলিশার্স-এর চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামি লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারে চাপ দেওয়া হয়। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েই গ্রেফতার হন তিনজন।

পরবর্তী সময়ে, থানায় গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেন হান্নান মাসউদ। কিন্তু এটি সংগঠনের ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে গেলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া অনিবার্য— এমনটিই মনে করছেন এনসিপির সংশ্লিষ্টরা। তবে হান্নান মাসউদের ব্যাখ্যার পর পরবর্তী সাংগঠনিক পদক্ষেপ ঠিক করবে দলীয় শৃঙ্খলা কমিটি।


বাংলাধারা/এসআর