ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬ শীর্ষ নেতার পদত্যাগ

রংপুর প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০৬:১২ সকাল  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষস্থানীয় ১৬ জন নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। রোববার (১৮ মে) রাত ৯টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে, আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন বলেও সেখানে জানানো হয়।

পদত্যাগকারীদের দাবি, সংগঠনের কিছু শীর্ষ নেতা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, জমি দখল এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মতো গুরুতর অনিয়মে জড়িত। এসব অপকর্ম সংগঠনের মূল চেতনা ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সিয়াম আহসান আয়ান (যুগ্ম সদস্য সচিব, মহানগর), আদনান সামির, মাহদী হাসান অনিক, রাতুল, এনায়েত রাব্বি, আরাফাত সানি আপন, আল শামস সিয়াম, আল আমিন, সীমান্ত হোসেন, মোজাহিদ, আল তানজীল আহসান, মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, জুনাইদ ইসলাম সাদিদ, সৃজন শাহ, মাহতাব হোসেন আবির এবং সাওম মাহমুদ সিরাজ।

এর আগেই, গত ১৫ মে জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান লিওন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রথম পদত্যাগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান বলেন, “পুরো দেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিল। কিন্তু আমরা সেই বিশ্বাস রাখতে পারিনি। জেলা ও মহানগর কমিটির একাধিক নেতা টেন্ডার বাণিজ্য, জমির দালালি, মামলা বাণিজ্য এবং মেলায় জুয়ার আসর থেকে চাঁদা আদায় করেছেন। শুধু তাই নয়, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ৩০ জনের নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বাণিজ্য করা হয়েছে।”

জেলা কমিটির সদস্য মাহতাব হোসেন আবির বলেন, “দুই মাস আগে রংপুরের ঘাঘট এলাকায় একটি বাণিজ্য মেলায় হাউজি জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখানে জেলা ও মহানগর নেতারা প্রায় ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেন। এছাড়া, গত বছরের বন্যায় ত্রাণ হিসেবে সংগৃহীত ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণও রয়েছে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা দেব।”

মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, “আমি কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে, তাহলে প্রমাণ দিতে হবে। এটি হয়তো কারও স্বার্থে আঘাত লাগায় ঘটেছে। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করে লিখিত প্রতিক্রিয়া জানাবো।”

উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর রাতে ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে আহ্বায়ক এবং রহমত আলীকে সদস্য সচিব করে ১১২ সদস্যের মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিনে জেলা কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান ইমরান আহমেদ এবং সদস্য সচিব হন ডা. আশফাক আহমেদ জামিল। দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও অসন্তোষ চলছিল বলে পদত্যাগকারীরা দাবি করেছেন।

পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, “আমরা দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠার সঙ্গে সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু কিছু গুটি কয়েক নেতার অপকর্মের দায় আমরা নিতে পারি না। এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, আন্দোলনের জন্যও কলঙ্কজনক। তাই সম্মানবোধ ও আদর্শের জায়গা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।”

দেশজুড়ে আলোচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর শাখায় এমন পদত্যাগ-পর্বকে বিশ্লেষকরা ভাবছেন বড় ধাক্কা হিসেবে। প্রশ্ন উঠেছে, আদর্শিক নেতৃত্ব সংকট এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পথকে কোথায় নিয়ে যাবে?

 

বাংলাধারা/এসআর