ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

নারীর ঘামের গন্ধেই কমে মানসিক চাপ? মানব শরীরেও কি আছে ফেরোমোনের ইঙ্গিত!

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ০২, ২০২৫, ০৯:২০ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

নারীর বগলের গন্ধ কি সত্যিই পুরুষের মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন এক বিস্ময়কর তথ্য, যা আমাদের মানব সম্পর্কের জৈবিক দিক নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানান, নারীর শরীরের গন্ধ- বিশেষ করে মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে- পুরুষের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই সময় নারীর শরীর থেকে নিঃসৃত গন্ধ পুরুষদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয় এবং একই নারীর চেহারাও তখন তাঁদের কাছে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে হয়।

গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের লালার নমুনায় দেখা গেছে, যাঁরা এই গন্ধ পেয়েছেন, তাঁদের শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস-হরমোনের পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ নারীর শরীর থেকে আসা নির্দিষ্ট গন্ধ তাদের মানসিক চাপ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

নারীর মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায় বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক যৌগ, যেগুলোর মাত্রা ডিম্বাণু নির্গমনের সময় বাড়ে। এ সময় নারীর প্রজনন সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই যৌগগুলো বগলের ঘামের সঙ্গে মিশে একটি বিশেষ গন্ধ তৈরি করে, যা পুরুষদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়।

প্রাণিজগতে ফেরোমোন- এক ধরনের রাসায়নিক বার্তা- প্রজনন, সামাজিক আচরণ ও এলাকা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। তবে মানুষের মধ্যে ফেরোমোন আছে কি না, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। নতুন এই গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, মানব শরীরেও ফেরোমোন-সদৃশ রাসায়নিকের অস্তিত্ব থাকতে পারে।

তবে গবেষকেরা এখনই নিশ্চিত নন। অধ্যাপক কাজুশিগে তোহারা বলেন, “আমরা বলছি না এটা নিশ্চিতভাবে মানব ফেরোমোন। তবে এটা স্পষ্ট যে, এই যৌগগুলো মানব আচরণে গভীর প্রভাব ফেলছে।”

গবেষণাটি সহজ ছিল না। মাসিক চক্রের বিভিন্ন সময় ২০ জন নারীর শরীর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘামের নমুনা সংগ্রহ করতে গবেষকদের এক মাসের বেশি সময় লেগেছে। প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর শরীরের তাপমাত্রা ও অন্যান্য জৈবিক চিহ্নও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

গবেষণার প্রধান লেখক নোজোমি ওহগি বলেন, “সঠিক সময়ে সঠিক গন্ধ সংগ্রহ করতে আমাদের অসাধারণ সতর্কতা ও ধৈর্য দেখাতে হয়েছে।”

এখন গবেষকেরা আরও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর ওপর গবেষণা করতে চান, যেন জাতিগত বা জিনগত ভিন্নতার প্রভাব বোঝা যায়। একই সঙ্গে তাঁরা খুঁজে বের করতে চান, এই গন্ধ মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলে প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।

যদিও ফেরোমোনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়, তবে এই গবেষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে—মানব শরীরের গন্ধ শুধু পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত রুচির বিষয় নয়, বরং এটি জৈবিকভাবেও আমাদের মানসিক ও সামাজিক আচরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

কোনো এক গভীর সম্পর্কের শুরু হয়তো হতে পারে শুধুই গন্ধের ইশারায়!

বাংলাধারা/এসআর