প্রতিদিন সকালে সন্তানকে শেখানোর ৫টি জরুরি অভ্যাস
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১১:২০ রাত

ছবি: সংগৃহিত
একসময় আমাদের শিশুদের মুখে মুখে থাকত সেই চিরচেনা ছড়াটি-
‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’
কালের স্রোতে বদলে গেছে সমাজ, বদলে গেছে জীবনধারা। এখন অনেক শিশুই দিন শুরু করে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে, আর রাত শেষ করে ঘুমের সঙ্গে যুদ্ধ করে। অথচ, একটি শিশু কীভাবে তার সকাল শুরু করছে, তা তার পুরো দিনের মনোভাব, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং শৃঙ্খলার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
তাই প্রতিদিন সকালে কিছু ভালো অভ্যাস শিশুর জীবনে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এই অভ্যাসগুলো শুধু তাকে একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে না, বরং আত্মনির্ভরশীলতাও শিখাবে। চলুন জেনে নিই, এমন পাঁচটি অভ্যাস যা সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো উচিত-
১. সময়মতো ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস
সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ওঠার অভ্যাস শিশুর শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দ বা সারকাডিয়ান রিদম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে শরীর-মন থাকে সতেজ, মনোযোগ বাড়ে এবং দিন শুরু হয় একধরনের ইতিবাচকতায়।
মা-বাবা হিসেবে সন্তানকে একটি রুটিনে অভ্যস্ত করে তুলুন। নিয়মিত ঘুম ও জাগরণ শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে। ছুটির দিনে চাইলে একটু ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
২. নিজের বিছানা গুছিয়ে রাখা
ঘুম থেকে ওঠার পর নিজে নিজে বিছানা গুছানো একটি ছোট কাজ মনে হলেও, এটি নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মনির্ভরতার অন্যতম ভিত্তি। দিনের শুরুতেই নিজের দায়িত্ব নিজে পালন করার অভ্যাস শিশুর মধ্যে পরিপাটি ও দায়িত্বশীল হওয়ার বীজ বুনে।
৩. মুখ ধোয়া ও দাঁত ব্রাশ করা
শিশুর স্বাস্থ্যকর জীবনের যাত্রা শুরু হোক সঠিক মৌলিক পরিচর্যা দিয়ে। ঘুম ভাঙার পর সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধোয়া ও দাঁত ব্রাশ করানো অভ্যাসে পরিণত করুন।
এ সময় মোবাইলের দিকে দৃষ্টি সরে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বরং তাকে একটি পত্রিকা বা শিশুদের জন্য উপযোগী কোনো বই হাতে দিন, এতে প্রযুক্তির আসক্তি কমবে, পড়ার অভ্যাসও গড়ে উঠবে।
৪. হালকা শরীরচর্চা
সকালের কয়েক মিনিট ব্যায়াম শরীরকে রাখে ফুরফুরে, মনকে করে চনমনে। শিশুদের জন্য এটি হতে পারে কিছুটা দৌড়ঝাঁপ, লাফানো, বা সহজ যোগব্যায়াম।
মা-বাবারাও সন্তানদের সঙ্গে শরীরচর্চায় অংশ নিলে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়, এবং শিশুরাও অনুপ্রাণিত হয় নিয়ম মানতে।
৫. পুষ্টিকর নাশতা খাওয়া
দিনের শুরুটা হোক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর নাশতায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড বা বেশি চিনি দেওয়া খাবারের পরিবর্তে দিন ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার,যেমন ডিম, দুধ, ফল, বা সবজি দিয়ে তৈরি রুটি/স্যান্ডউইচ।
সন্তান যেন সকালের খাবার এড়িয়ে না যায়, সে দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত পুষ্টিকর নাশতা শিশুদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও শেখার আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
সন্তানের আচরণ গঠনের বীজ বোনা হয় তার ছোটবেলায়, আর সেই বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে প্রতিদিনের অভ্যাস দিয়ে। প্রতিটি সকালই তাই হতে পারে নতুন শেখার সুযোগ। মা-বাবার ভালো অভ্যাসই সন্তানের আয়না হয়ে ওঠে।
তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ছোট ছোট অভ্যাসগুলো নিয়ম করে শেখান সন্তানকে। আজকের এই অভ্যাসই গড়ে দেবে আগামীর সফল ও সুশৃঙ্খল মানুষ।
বাংলাধারা/এসআর