বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১১:২১ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিন সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হবে লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এবার মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন এই পাবলিক পরীক্ষায়। এর মধ্যে শুধুমাত্র সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রয়েছেন ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এছাড়া আলিম পরীক্ষার্থী প্রায় ৮৬ হাজার এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। ২০২৪ সালে অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এ হ্রাসের পেছনে বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাগত বাস্তবতা কাজ করেছে।
পরীক্ষাকে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নকলমুক্ত রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়েছে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ। প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকানো, পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য জারি করা হয়েছে ১০টি নির্দেশনা, যার মধ্যে রয়েছে-
- পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা
- ওএমআর শিটে তথ্য যথাযথভাবে পূরণ ও বৃত্ত ভরাট করা
- উত্তরপত্র ভাঁজ না করা
- শুধু সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার
- এমসিকিউ ও সৃজনশীল অংশে কোনো বিরতি থাকবে না
- কেন্দ্রে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- তত্ত্বীয়, এমসিকিউ ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে পাস করতে হবে
- নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হবে না, স্থানান্তরের মাধ্যমে আসনবিন্যাস করা হয়েছে
- প্রবেশপত্রে যেসব বিষয় উল্লেখ রয়েছে, শুধুমাত্র সেসব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে
প্রতিটি পরীক্ষায় স্বাক্ষরসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক
- পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকবে কড়া নজরদারি
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা সুষ্ঠু করতে ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: - প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন কক্ষ পরিদর্শক
- শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে বসার ব্যবস্থা
- তিন দিন আগেই প্রশ্নপত্র যাচাই করে খামে সংরক্ষণ
- পরীক্ষা শুরুর দিনে নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খাম খোলা এবং অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠানো
- প্রশ্নপত্র আনতে গেলে পুলিশ ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা
- পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, মাইকিং করে সচেতনতা তৈরি
- সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নকলবিরোধী পোস্টার টানানো বাধ্যতামূলক
- কেন্দ্রে শুধু কাঁটাযুক্ত এনালগ ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে
- বর্ষাকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঠেকাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে
স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়েও নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। পরীক্ষাকেন্দ্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, সঙ্গে রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়ানো রোধে কড়া নজরদারি থাকবে।
২০২৪ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরও সচেতন ও গোছানো প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেন এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেই প্রত্যাশা সকলের।
বাংলাধারা/এসআর