বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৫, ০১:২৬ দুপুর

ফাইল ছবি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজ তাদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটির যাত্রা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে দলীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। এর পাশাপাশি রাজধানী ও সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা এবং র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন তাঁর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। গৃহবধূ থেকে রাজনীতির অঙ্গনে পদার্পণ করে তিনি দ্রুতই দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে- ১৯৯১, ১৯৯৬ (স্বল্পকালীন) এবং ২০০১ সালে। তবে ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে তিনি নানা মামলা, কারাভোগ ও দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে আর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে পারেননি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দী হওয়ার পর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। গত বছর রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তির মাধ্যমে নতুন করে ঘরে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বর্তমানে ৭৯ বছর বয়সী এই নেত্রী রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও দলের সর্বস্তরে তাঁর প্রভাব অটুট।
২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। লন্ডন থেকে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন। ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পুনর্গঠন ও আন্দোলনে সক্রিয় রাখতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে তারেক রহমান বলেন, “দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই বিএনপির মূল লক্ষ্য।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।”
অন্যদিকে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বাণীতে বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আইনের শাসন সুদৃঢ় করলেই প্রকৃত নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। দুঃশাসনের কাঠামো ভেঙে একটি মানবিক ও পরমতসহিষ্ণু সমাজ গড়ে তোলাই জাতীয়তাবাদী শক্তির লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে বিএনপি একটি ১৬ সদস্যের জাতীয় উদ্যাপন কমিটি গঠন করেছে। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আহ্বায়ক এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের করা হবে। এছাড়া ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন থাকবে।
১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকার পাশাপাশি মামলা, দমন-পীড়ন ও নেতৃত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়ে দলটি এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জে রয়েছে।
আজকের দিনটি বিএনপির জন্য শুধু একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং নতুন করে আশা ও প্রেরণার প্রতীক হয়ে এসেছে।
বাংলাধারা/এসআর