ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

প্রার্থী বাছাইয়ে মধ্যপথে বিএনপি, গুরুত্ব তরুণ নেতৃত্বে

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:৪৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পূর্ণ উদ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ছয় ধাপের একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলটি প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, যার তৃতীয় ধাপ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এই ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ প্রক্রিয়া চলছে। প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা ও সক্ষমতার পাশাপাশি তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর, গুলশান ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে তারেক রহমান নিজস্ব সূত্রে সারাদেশে একটি গোপন জরিপ পরিচালনা করেন। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। এখন চলছে তৃতীয় ধাপ, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য ও নথি সংগ্রহের মাধ্যমে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান কালবেলাকে বলেন, “আমরা অক্টোবরের মধ্যেই প্রাথমিক তালিকা তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছি। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নির্ধারণ হবে ধাপে ধাপে। এ প্রক্রিয়া সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।”

তিনি আরও বলেন, “এটি একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। কাউকে এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই তপশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া জানান, তার বিভাগের ২২টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। “কিছু আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন, সেগুলোতে দলের ঐক্য বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকতও একই তথ্য দিয়ে বলেন, “এখন আমরা প্রার্থীদের নথিপত্র কেন্দ্রে জমা দিচ্ছি। এটি প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, তৃতীয় ধাপ শেষে শুরু হবে চতুর্থ ধাপ, মনোনয়ন ফরম বিক্রি। এরপর পঞ্চম ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড, যেখানে প্রার্থীদের রাজনৈতিক যোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের রূপরেখা সম্পর্কে জ্ঞান যাচাই করা হবে। ষষ্ঠ ধাপে ঘোষিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিতে চায়। দলটি মনে করে, গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। এজন্য অন্তত শতাধিক আসনে নতুন মুখ আনার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।

দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু বলেন, “বিএনপি এবার অভিজ্ঞতা ও নবীন নেতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য আনতে চায়। তারেক রহমানও বলেছেন, জনগণের সঙ্গে যাদের নিবিড় সম্পর্ক, তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।”

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, “আমরা এমন একটি প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে চাই যা শুধু দলের ভেতর ঐক্যের প্রতীক হবে না, সাধারণ মানুষের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হবে। এটি বিএনপির নির্বাচনী কৌশলের অংশ।”

সূত্রগুলো আরও জানায়, অক্টোবরের মধ্যেই প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণের লক্ষ্য রয়েছে দলের। এরই মধ্যে বহু সম্ভাব্য প্রার্থী তারেক রহমানের সরাসরি ফোন পেয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে দলীয় নেতারা এটিকে ‘সবুজ সংকেত’ নয়, বরং ‘প্রাক-নির্বাচনী সাংগঠনিক প্রক্রিয়া’ বলেই দেখছেন।

সব মিলিয়ে বিএনপি এবার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি কাঠামোবদ্ধ ও বিশ্লেষণনির্ভরভাবে প্রার্থী বাছাই করছে, যেখানে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাধারা/এসআর