ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলল এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ০২, ২০২৫, ০৯:৩২ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল-এর বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন প্রসঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

রোববার (২ নভেম্বর) এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অভিযোগ জানানো হয়। চিঠিটি আইন উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে এনসিপি অভিযোগ করেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে আলোচনার সময় একটি রাজনৈতিক দলকে ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। দলটির মতে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহির পরিপন্থী।

চিঠিতে বলা হয়, “একজন আইন উপদেষ্টা হিসেবে আপনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, কোনো রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র নন। নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট দলকে আশ্বাস দেওয়া জনআস্থা ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ভূমিকার পরিপন্থি।”

এনসিপি আরও বলেছে, আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত কোনো একক ব্যক্তির হতে পারে না, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পরামর্শনির্ভর প্রক্রিয়া। তাই কোনো দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থানকে দুর্বল করে এবং সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

চিঠিতে তিনটি যুক্তি উপস্থাপন করেছে এনসিপি-

প্রথমত, নিবন্ধিত দলগুলো অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের নিবন্ধনের অর্থ ও দায়বদ্ধতা হারিয়ে যায়। এতে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণক্ষমতাও দুর্বল হয়।

দ্বিতীয়ত, ভোটার জানেন না তিনি আসলে কাকে ভোট দিচ্ছেন, ফলে জনগণের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তৃতীয়ত, এই বিধান কৃত্রিম বহুদলীয়তা সৃষ্টি করে, বড় দলগুলোকে সুবিধা দেয় এবং ছোট দলগুলোকে ‘প্রক্সি দল’ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে। এতে গণপরিসরে প্রকৃত মতবৈচিত্র্য হারিয়ে যায় এবং নীতিনির্ধারণে কৃত্রিম ঐকমত্য গড়ে ওঠে।

এনসিপি মনে করে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন-এর প্রস্তাব অনুযায়ী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ২০ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত, “কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।”

তারা আরও প্রস্তাব দিয়েছে, যৌথ জোট বা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী মনোনয়নের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে একত্রে নতুন নিবন্ধিত সত্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়, এই সংশোধন রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সীমিত করবে না বরং প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও জবাবদিহি শক্তিশালী করবে। এতে ভোটার নিজের পছন্দের দল, নীতি ও নেতৃত্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন এবং রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতাও বাড়বে।

শেষে এনসিপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করার জন্য।

বাংলাধারা/এসআর