ভারতের পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন, আইএইএ’র তদন্ত চায় পাকিস্তান
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০৪:৫০ দুপুর

ফাইল ছবি
ভারতে পারমাণবিক পদার্থ চুরি ও রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদানের অবৈধ পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভারতের পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে- এমন দাবি তুলে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-কে তদন্তে নামার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
শুক্রবার (১৬ মে) পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের একাধিক পারমাণবিক নিরাপত্তা ঘাটতির ঘটনা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেইসঙ্গে নয়াদিল্লিকে নিজস্ব পারমাণবিক স্থাপনা ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতে বারবার রেডিওঅ্যাকটিভ ও পারমাণবিক উপাদান চুরি ও পাচারের ঘটনা ঘটছে। এই বিষয়ে IAEA ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা এবং স্বাধীন তদন্ত করা।”
পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক অবস্থান এসেছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। শ্রীনগরে সেনাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজনাথ বলেন, “পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো IAEA-এর তত্ত্বাবধানে আনা উচিত।”
এই বক্তব্যকে ভারতীয় নিরাপত্তাহীনতা এবং পাকিস্তানের কার্যকর প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রতি অসন্তুষ্টির প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, “ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য তার অজ্ঞতা ও হতাশার প্রকাশ। তিনি IAEA’র দায়িত্ব ও কার্যক্রম সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন।”
পাকিস্তান দাবি করেছে, শুধু গত বছরেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদান চুরির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে দেহরাদুন শহরে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে চুরি হওয়া এক ডিভাইসসহ পাঁচ ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। এছাড়াও, একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাছে ক্যালিফোর্নিয়াম নামক একটি উচ্চমাত্রায় বিকিরণকারী উপাদান পাওয়া যায়, যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি ডলার।
২০২১ সালেও ক্যালিফোর্নিয়াম চুরির তিনটি পৃথক ঘটনা ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নথিভুক্ত হয়েছিল। এসব ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরে একটি সক্রিয় পারমাণবিক ব্ল্যাক মার্কেটের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় বলেও মন্তব্য করেছে পাকিস্তান।
সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই হামলার দায়ভার নিয়ে পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে দিল্লি। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ভারত কোনো পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না। সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে নির্ভুলভাবে আঘাত হানা হবে।”
এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় আনার কৌশল নিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
পাকিস্তান বলছে, ভারতের অভ্যন্তরে পারমাণবিক ও দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য উপাদান চুরির ধারাবাহিকতা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। দেশটি আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন এই বিষয়ে নীরবতা না রাখা হয় এবং অবিলম্বে একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করা হয়।
প্রসঙ্গত, দুই প্রতিবেশী দেশই পরমাণু শক্তিধর। এমন বাস্তবতায় পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও একে অপরকে অভিযুক্ত করার প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা হুমকির জন্ম দিতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।
বাংলাধারা/এসআর