মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প, এক ফোঁটা তেল আর ৪৪০ বিলিয়নের চুক্তি
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ০১:০৩ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সাম্প্রতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরে এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি আবুধাবিতে একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় এক ফোঁটা দামী তেল- তাও আবার একটি ছোট ক্যাপসুলে ভরে!
এই বিশেষ উপহারটি দেন আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক)-এর প্রধান নির্বাহী সুলতান আল জাবের। উপহারটি ছিল 'মুরবান' নামের একটি উচ্চমানের তেল, যা বিশ্বব্যাপী অন্যতম সেরা এবং পরিচ্ছন্নতম ক্রুড অয়েল হিসেবে স্বীকৃত।
ট্রাম্প উপহারটি গ্রহণ করে স্বভাবসুলভ হাস্যরসের ভঙ্গিতে বলেন, "এটা পৃথিবীর সেরা তেল, কিন্তু আমাকে দেওয়া হলো মাত্র এক ফোঁটা! আমি খুব খুশি নই।" তার এই মন্তব্যে পুরো হলজুড়ে হাসির রোল পড়ে যায়।
'মুরবান' তেল আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৮ সালে। এটি অত্যন্ত কম সালফারযুক্ত ও হালকা গ্র্যাভিটি বিশিষ্ট (৪০ API), যার কারণে এটি পরিশোধনে সহজ এবং পরিবেশবান্ধব। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন কাঁচা তেলগুলোর একটি, যার কার্বন নিঃসরণও অত্যন্ত কম।
তেল উপহারের কৌতুকময় মুহূর্তটিই ছিল না এই সফরের মূল আকর্ষণ। আসল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দুই দেশের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণা।
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ইউএই ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জ্বালানি খাতে একটি বিশাল বিনিয়োগ চুক্তি সই হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে দুই দেশ মিলে মোট ৪৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বিভিন্ন জ্বালানি প্রকল্পে।
এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় তেল ও গ্যাস কোম্পানি এক্সনমোবিল, অক্সিডেন্টাল এবং ইওজি রিসোর্সেস। লক্ষ্য- স্বল্প কার্বন নির্গমনকারী ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।
শুধু তেল-গ্যাসেই নয়, প্রযুক্তি খাতেও বড়সড় বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। ইউএই মার্চ মাসে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১০ বছরে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই বিপুল অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে ব্যয় করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলভিত্তিক অর্থনীতি এখন ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য খাতে নিজের অবস্থান তৈরি করছে, আর এই চুক্তিগুলো সেই রূপান্তরেরই প্রতিচ্ছবি।
ট্রাম্পের প্রাপ্ত ‘এক ফোঁটা তেল’ যেমন ছিল একটি কূটনৈতিক হাস্যরস, তেমনি এটি প্রতীকীভাবে মনে করিয়ে দেয় যে, বৈশ্বিক জ্বালানি রাজনীতিতে এখন প্রতিটি ফোঁটারই মূল্য অনেক। কিন্তু সেইসঙ্গে এই সফর ও বিনিয়োগের ঘোষণাগুলো বিশ্ববাজারে মার্কিন-আমিরাত সম্পর্কের নতুন মাত্রাকেও নির্দেশ করছে।
বাংলাধারা/এসআর