ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব না দিলে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৬:০৯ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ২১ মে, বুধবারের মধ্যে বুঝিয়ে না দিলে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তার সমর্থকরা। একইসঙ্গে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সামনে আবারও কঠোর অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ষষ্ঠ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে ঢাকা অচল করে দেওয়া হবে।”
এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে নগরবাসীর প্রতি নাগরিকসেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা। উপস্থিত ছিলেন স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে পরদিন থেকে পরিচ্ছন্নতা, ময়লা পরিবহন, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সব ধরনের সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সামনের সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তৈরি করা হয় একটি অস্থায়ী মঞ্চ, যেখানে বাজানো হয় জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘ইশরাককে দায়িত্ব দাও’ এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
অবরোধের ফলে বঙ্গবাজার থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছয়দিন ধরে চলমান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাগরিক সেবার অন্তত ২৮টি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২০২০ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এরপর গত ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাককে নির্বাচিত ঘোষণা করে এবং ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার।
নগর ভবন ঘিরে চলমান সংকট নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এক ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন লিখেছেন, “ঢাকায় বিএনপির মেয়র ঠেকাতে যে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী হবে তা এখনই স্পষ্ট।” তিনি আরও লেখেন, “এটা শুধু মেয়রফের দাবি নয়, এটি ক্ষমতার লোভ ও সেটিকে চিরস্থায়ী করার কুৎসিত প্রচেষ্টাকে জনসমক্ষে উন্মোচনের লড়াই।”
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু ব্যক্তি নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, “নির্বাচনী জটিলতা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনও ইশরাকের শপথ সম্ভব নয়।” তিনি বলেন, “গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালানো হচ্ছে, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এবং সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।”
পোস্টে তিনি শপথ গ্রহণে অন্তরায় ১০টি জটিলতার কথা উল্লেখ করেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
বাংলাধারা/এসআর