৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতিতে দৃঢ় অবস্থান নিতে চায় বাংলাদেশ
প্রকাশিত: আগস্ট ০৪, ২০২৫, ০৯:১৫ সকাল

ছবি: সংগৃহিত
বিশ্বব্যাপী ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান গড়ে তুলতে বাংলাদেশ এখন নীতিগত ও কাঠামোগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশকে হালাল পণ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘হালাল ইকোনমি ৩৬০ : ড্রাইভিং গ্লোবাল গ্রোথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) সেমিনারটির আয়োজন করে।
চৌধুরী আশিক বলেন, “বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ হালাল পণ্যই অমুসলিম দেশগুলো উৎপাদন করে থাকে, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও, এটিই আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। বাংলাদেশ, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে, সঠিক নীতিমালা ও কৌশলের মাধ্যমে এই খাতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলা, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সহযোগিতা জোরদারে সরকার কাজ করছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান। তিনি মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে শেয়ার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “হালাল অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা দু’দেশেরই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বিএমসিসিআই সভাপতি সাব্বির এ খান তার বক্তব্যে বলেন, “হালাল অর্থনীতি এখন শুধু ধর্মীয় বিধিবিধানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ রপ্তানি নির্ভর পোশাক শিল্পের বাইরে গিয়ে হালাল পণ্য ও সেবা খাতে বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে।”
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্য ও সেবার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে হালাল খাদ্যবাজারের আকার হবে প্রায় ৩.৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩৪ সালের মধ্যে বেড়ে ৯.৪৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার হবে ১২.৪২ শতাংশ।
সাব্বির খান আশা প্রকাশ করেন, প্রয়োজনীয় নীতিমালা, সহজতর সনদ প্রক্রিয়া ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কেবল মালয়েশিয়াতেই বাংলাদেশ ৭-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হালাল পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
তবে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৯৩.৫১ মিলিয়ন ডলার।
এই সেমিনারকে ঘিরে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক এবং হালাল অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা হালাল পণ্যের বাজার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা বাংলাদেশকে এই বহুল প্রতিশ্রুতিশীল খাতে একটি নতুন রপ্তানির গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাধারা/এসআর