ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

২০২৪-এর শহীদদের বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ০৫, ২০২৫, ১২:৪৪ দুপুর  

ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

২০২৪ সালের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানকে “একটি জাতির রক্তস্নাত জাগরণ” হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সাল ছিল সেই স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।”

তারেক রহমান দাবি করেন, ঠিক এক বছর আগে এই দিনে “পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকার” দেশত্যাগ করে, যার মধ্য দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চলা “দুঃশাসনের অবসান” ঘটে এবং বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করে। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে ৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দিনটি এখন সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হচ্ছে।

ভাষণে তারেক রহমান বলেন, “একুশ শতকের বাংলাদেশে এক ভয়াবহ স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন ছিল তাদের শাসনের নিত্যদিনের বাস্তবতা।” তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয় এবং হাজারো পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, সেই সময় শত শত গোপন আটককেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল, যেগুলোর নাম ছিল ‘আয়নাঘর’। সেখানে মানুষকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। অনেকে আর কখনো ফিরে আসেনি। তিনি বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের কথা স্মরণ করেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণআন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষ শহীদ এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আহত হন বলে দাবি করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, এমনকি নারী ও শিশুরাও রক্ষা পায়নি ফ্যাসিস্টদের গুলির হাত থেকে।” তিনি আবেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন কোলের শিশু আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধের নাম, যারা শহীদ হয়।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, “ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ছিল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের বদলে তুলে দেওয়া হয়েছিল লগি, বৈঠা ও চাপাতি।” তিনি বলেন, “ব্যাংক লুট, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছিল।”

তারেক রহমান শহীদদের প্রতি চিরঋণী থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “তাদের রক্তে পথ দেখানো হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।” তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “৫ আগস্টের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে গণভবন ফাঁকা করে সরকার পালিয়ে যায়। এমনকি সংসদ, আদালত, বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত দেশত্যাগ করেন। বিশ্বের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।” তবে তিনি বলেন, “পলাতক এই ফ্যাসিস্টদের এখনো অনুশোচনা নেই, যা উদ্বেগজনক।”

শেষে তারেক রহমান আহ্বান জানান, “এই রক্তাক্ত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, গৃহবধূ- সবাই ছিল একই কাতারে। এই ঐক্য যেন কোনো অবস্থাতেই ভাঙতে না পারে। বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদের ঠাঁই হবে না।”

 

বাংলাধারা/এসআর