ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

পতিত ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জামায়াত : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৪:৫৯ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, জামায়াতে ইসলামী আবারও তাদের স্বরূপে ফিরে গিয়ে পতিত ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, “যারা ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইছে, তারা কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি? আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি দল বরাবরই আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করেছে। অথচ তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। নিষিদ্ধ সংগঠন হয়েও শহীদ জিয়া তাদের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনো জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করেনি, বরং নানা সময়ে কটূক্তি করেছে। এর পরও তাদের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সুরে সুর মিলিয়ে কাজ করেছে।”

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই জামায়াত আওয়ামী লীগের ছায়াতলে গিয়ে আন্দোলন করেছে। এমনকি ১৯৯৫-৯৬ সালের সহিংস আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র টিটোকে ইসলামী ছাত্রশিবির গুলি করে হত্যা করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও জামায়াত নেতৃত্ব দিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে।

রিজভীর দাবি, “আজ আবারও তারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাইছে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে। অথচ আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দেশই দেখেছে শেখ হাসিনার রক্তপিপাসু দানবীয় শাসন, যেখানে মানুষকে হত্যা করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার নজির তৈরি হয়েছিল।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যেভাবে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, তার পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ নেই। “বাংলাদেশের মানুষ মধ্যপন্থী, ধর্মভীরু এবং গণতন্ত্রপ্রিয়। তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়। ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান চেষ্টাকে জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সম্প্রতি জমা দেওয়া কিছু প্রমাণের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সেখান থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালানো এবং ভয়াবহ দমননীতির আলামত প্রকাশ পাচ্ছে। “আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, জেল-জুলুম সহ্য করেছি, তাদের কাছে এসব নতুন কিছু নয়। তবে আদালতে যে ভয়ংকর প্রমাণগুলো প্রকাশ হচ্ছে, তা শুনলে শিহরিত না হয়ে উপায় নেই।”

অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। রিজভীর অভিযোগ, “উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া নিজের এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়েছেন। এটি বৈষম্যমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতির অংশ।”

তিনি আরও বলেন, একজন সরকারি উপদেষ্টা কিংবা উচ্চপদস্থ আমলার এভাবে নিজ এলাকায় বিশাল অঙ্কের সরকারি অর্থ বরাদ্দ নেওয়া অনৈতিক ও নীতিবিরোধী। “আমরা শুনেছি, কেবিনেট সচিবও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত এবং অবসরের পর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটি দুঃখজনক এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতার পরিপন্থী।”

বাংলাধারা/এসআর