ঝিনাইদহ আসামী হাজির না করেই জামিন আবেদন, আদালত থেকে পালালেন আ’লীগ নেতা
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ০৯:৪৪ রাত

ঝিনাইদহে আসামীকে আদালতে হাজির না করেই আত্মসমর্পন ও জামিন আবেদনের ঘটনা ঘটেছে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে গেছেন মামলার এক নম্বর আসামী। পলাতক অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম খান। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য।
রোববার (২৯ জুন) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে আসামীকে আদালতে হাজির না করেই কৌশলে আত্মসমর্পন করানো ও জামিন চেষ্টার ঘটনায় জেলার আদালত পাড়ায় শুরু হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
অনুপস্থিত থেকে আত্মসমর্পন ও জামিন চেষ্টাকারী অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম খান কালীগঞ্জের নাটোপাড়া গ্রামের হাসেম আলী খানের ছেলে।
জানা যায়, সম্প্রতি নাটোপাড়া গ্রামে শাহিনুর রহমান শাহিন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শাহিনুর রহমান বাদি হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম খানকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মোট আসামী ২৫ জন। রোববার ওই মামলার ২৫ জন আসামী আত্মসমর্পন ও জামিন নেয়ার জন্য আদালতে যান। আসামীপক্ষের আইনজীবী শারমিন সুলতানা শ্যামলী ২৫ জন আসামীর আত্মসমর্পন ও জামিনের জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে আসামীরা ..... আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় আদালত আসামী গণনা শেষে মামলার প্রধান আসামী নজরুল ইসলাম খানকে অনুপস্থিত পান।
এসময় আদালত আইনজীবীকে এক ঘণ্টার ভেতরে অনুপস্থিত আসামী নজরুল ইসলাম খানকে হাজির করতে বলেন। এই খবর শুনে আদালত চত্বরে থাকা নজরুল ইসলাম খান পালিয়ে যান। পরে আদালত উপস্থিত ২৪ জন আসামীর মধ্যে ছোট তালিয়ান গ্রামের পাঁচ আসামিন জামিন মঞ্জুর করেন। এবং ১৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে আসামীকে আদালতে হাজির না করেই আত্মসমর্পন করানো ও জামিন প্রার্থনার ঘটনাটি আদালত চত্বরে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেষ্ঠ্য আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আসামী হাজির না করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করা ও জামিন প্রার্থনা করার বিষয়টি লজ্জাজনক। এ ধরণের ঘটনায় আইনজীবীদের সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।
এ ঘটনায় আসামীপক্ষের আইনজীবী শারমিন সুলতানা শ্যামলী বলেন, ২৫ জন আসামীকে আত্মসমর্পন ও জামিন প্রার্থনার আবেদন করা হয়। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম অন্য একটি মামলায় জজ কোর্টে হাজিরা দিতে যান। ঠিক ওই সময় আদালতে জামিন শুনানি শুরু হলে নজরুল ইসলাম খানকে অনুপস্থিত পান আদালত। পরে তাকে হাজির করার জন্য এক ঘণ্টা সময় দেন আদালত। কিন্তু এই খবর জানার পর আসামী নজরুল ইসলাম খান আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যান। পরে আর তাকে হাজির করা যায়নি। বাকি ২৪ জন আসামীকে আত্মসমর্পন করানো হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবি খলিল মিয়া জানান, এই মামলায় ২৫ জন আসামিকে আত্মসমর্পণ দেখিয়ে আদালতে জামিন চান আসামীপক্ষের আইনজীবী। কিন্তু আসামীদের মধ্যে আদালতে হাজির ছিলেন ২৪ জন। এক নম্বর আসামি নজরুল ইসলাম খান আদালতে গরহাজির ছিলেন। প্রধান আসামীকে আদালতে হাজির না করেই কৌশলে জামিন চেষ্টার বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ঘটনায় তদন্ত হলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।
ঝিনাইদহ জেলা আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. মুক্তার হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট মামলায় ১৯ আসামীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আত্মসমর্পন ও জামিন প্রার্থনার আবেদন থাকলেও এই মামলার ১ নং আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। সময় দিলেও তাকে আর আদালতে হাজির করেননি আসামীপক্ষের আইনজীবী। পরে ২৪ জনের মধ্যে ৫ জনকে জামিন দেন বিজ্ঞ আদালত।