ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ, ইসিকে চিঠি দেবে সরকার
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ০৭:৫৭ সকাল

ফাইল ছবি
চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার মধ্যেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিয়ে চলমান আন্দোলন, মেয়র ইশরাক হোসেনকে শপথ না করানো ও নগর সেবায় স্থবিরতা- এসব পরিস্থিতির অবসানেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর আওতায় বর্তমান প্রশাসক ব্যবস্থা নাগরিক সেবা ব্যাহত করছে। এই সংকট নিরসনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।’
আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন চেয়ে একটি আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে। নিজেকে ‘জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি চিঠিতে লিখেছেন, “প্রায় দুই কোটি মানুষের নাগরিক সেবা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।”
এদিকে, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানো নিয়ে তার সমর্থকরা কয়েক সপ্তাহ ধরে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ডিএসসিসির মূল কার্যালয়সহ আটটি আঞ্চলিক অফিসও বন্ধ রয়েছে, নগরবাসী নাগরিক সেবা পাচ্ছে না।
ডিএসসিসির বর্তমান প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “নগর ভবনের সব কার্যক্রম বন্ধ। নাগরিক সেবাও কার্যত স্থগিত রয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পরাজিত করেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ওই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইসি গেজেট প্রকাশ করলেও শপথ অনুষ্ঠান হয়নি।
শপথ অনুষ্ঠান না হওয়া ও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করায় ইসিকে দায়ী করছে এনসিপি। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “কমিশনের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে নগর ভবনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের উচিত ছিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ আপিল করা।”
সরকারি সূত্র জানায়, বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে শপথ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিরসনে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “আদালতের নির্দেশনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
অন্যদিকে, নির্বাচনের আগ-পিছ নিয়ে এখনো রয়েছে রাজনৈতিক মতভেদ। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দাবি করে আসছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় নির্বাচন নয়। তাদের দাবি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।
অপরদিকে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে এবং নির্বাচন নির্দলীয় করতে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “কোন নির্বাচন আগে হবে, সেটা আমাদের হাতে নেই। সরকার সিদ্ধান্ত দিলে নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী কাজ করবে।”
সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, ইসিকে চিঠি পাঠানো হলে দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো সরকারিভাবে চূড়ান্ত হয়নি।
জনগণের দুর্ভোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক স্থবিরতা দূর করতে এই নির্বাচনের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ওপর।
বাংলাধারা/এসআর