অবস্থান পুনর্বিবেচনার হুমকি বিএনপির: সহযোগিতা জারি থাকবে কি না, নির্ভর করছে সরকারের পদক্ষেপের ওপর
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ০৭:৪৯ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
সংস্কার প্রক্রিয়া ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আবারও কঠোর অবস্থান জানাল বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন, চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কি না, তা এখন পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির দেয়া পরামর্শ ও প্রস্তাবনা বারবার উপেক্ষিত হলে সহযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু উপদেষ্টা সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন এবং সরাসরি একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এমন অবস্থায় নির্দলীয় সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন এবং তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন। অথচ সরকারের মুখপাত্রের ভাষায় ‘সবকিছু করার ম্যান্ডেট’ রয়েছে- এমন মন্তব্য সরকারের সীমাবদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও মানবিক করিডর ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই কেবল এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কমিশনের বিরুদ্ধে এমন কর্মসূচি গ্রহণ বর্তমান সরকারকেও বিব্রত করছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে ইশরাক হোসেনকে দ্রুত শপথ করানোর দাবিও জানান তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “জুলাইয়ের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে, দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন জরুরি। এজন্য অবিলম্বে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।”
তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত এই নির্বাচন আয়োজন। এই দাবি উপেক্ষা করলে সরকারকে সহযোগিতা করা বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
সরকারের উপদেষ্টা পরিষদকে ‘মাথাভারী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদই যথেষ্ট। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা পাবে বলে মনে করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ বলেন, “নির্বাচনের আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যেন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় নাগালের মধ্যে রাখে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাধারা/এসআর