ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

গণভোটে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে নামছে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১২:১০ দুপুর  

ফাইল ছবি

একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট- বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। তাই ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বড় ধরনের প্রচারণায় নামতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে মানুষ যতটা পরিচিত, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের ভোটাররা গণভোট সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে কম জানে। এই বাস্তবতায় সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে গণভোট সচেতনতা কার্যক্রমও চালাবে সংস্থাটি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ইসি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোটের তফসিল ঘোষণা করতে পারে- এদিনই হবে গণভোটের ঘোষণাও।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, “গত বৃহস্পতিবার সরকারের একটি চিঠি পেয়েছি। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে- গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন, এবং তা সংসদ নির্বাচনের দিনই হবে।”

এর ফলে ইসির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সব পর্যায়ের ভোটারকে গণভোট সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন করা।

ইসির পরিকল্পনায় রয়েছে:

* গণভোট বিষয়ক বিশেষ ভিডিও ও ইনফোগ্রাফিক তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার
* বিটিভি, বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে টিভিসি, কাউন্টডাউন, স্লোগান ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান
* সাংবাদিকদের জন্য গণভোটবিষয়ক প্রশিক্ষণ
* নির্বাচনী এলাকাজুড়ে র‍্যালি, পথনাটক, লিফলেট ও পোস্টার প্রচার
* AI ও ফেক নিউজ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা জোরদার
* গুজব প্রতিরোধে বিটিভিতে ফ্ল্যাশ নিউজ প্রচার
* পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের নিয়ম নিয়ে আলাদা প্রচারণা

ইসির কর্মকর্তাদের মতে, একই দিনের দুই ভোটে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো- মানুষকে পরিষ্কারভাবে বোঝানো যে গণভোটে ভোট কেমনভাবে দিতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, গণভোট আইন পাস না হলে এ বিষয়ে কমিশন কাজ করতে পারবে না। আশা করছি আগামী সপ্তাহেই আইন পাস হবে। এরপরই প্রস্তুতি শুরু হবে। গণভোট হলে চারটি পয়েন্টেই হ্যাঁ/না ভোট হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের মতে, কয়েকদিন আগে থেকেই গণভোটকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো বড় বাধা দেখছি না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন,
“কার্যকর প্রস্তুতি, বাড়তি জনবল এবং সঠিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।”

তিনি ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের গণভোটের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন- ভোটকক্ষ বাড়িয়ে দিলে একই দিনে দুটি ভোট নিতে কোনো সমস্যা হয় না। কেন্দ্র বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে ব্যালট গণনায় দুই সেট কর্মী লাগবে- এক দল সংসদীয় ব্যালট গণনা করবে, আরেক দল গণভোটের ব্যালট গণনা করবে।

তিনি আরও বলেন, গণভোটের ক্ষেত্রে ব্যালট ইস্যু ও গণনা করার বিশেষ কৌশল রয়েছে। এজন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়াই জরুরি। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে দুটি ব্যালট ইস্যু করতে হবে- এটিও প্রস্তুতির অংশ।


ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন।
এর মধ্যে- 

* পুরুষ: ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭
* নারী: ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২
* তৃতীয় লিঙ্গ: ১ হাজার ২৩৪

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। একই দিনে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে- এ ঘোষণা আসার পর থেকে ইসি সব ধরনের প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে।


বাংলাধারা/এসআর