তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ, দুদকে হাজির হননি তুহিন ও মাহমুদুল
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৭:০৩ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
অবশেষে সময়সীমা পার হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে সাড়া দিলেন না স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক পিও (ব্যক্তিগত কর্মকর্তা) তুহিন ফারাবি ও তার ছাত্র প্রতিনিধি ডা. মাহমুদুল হাসান। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাদের গতকাল (২০ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও, দু’জনের কেউই সেখানে যাননি। এমনকি তারা সময় চেয়ে কোনো আবেদনও করেননি।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানান, “তাদের ডাকা হয়েছিল আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে। কিন্তু তারা না এলে, তা তাদের সিদ্ধান্ত। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে অনুসন্ধান থেমে থাকবে না। কমিশনের আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান চলবে এবং নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অফিস ঘিরে ঘনিয়ে আসা বিতর্ক নতুন নয়। নাম-বেনামে টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ইতোমধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছেন পিও তুহিন ফারাবি ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডা. মাহমুদুল হাসান।
জানা গেছে, গত ১৫ মে দুদক তাদেরকে তলব করে। একই দিনে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে ২১ মে এবং যুব ও ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২২ মে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়।
এর আগে, ২৭ এপ্রিল ‘যুব অধিকার পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন ‘মার্চ টু দুদক’ কর্মসূচির মাধ্যমে উপদেষ্টাদের এপিএস ও পিওদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত দাবি করে দুদকে স্মারকলিপি জমা দেয়। এছাড়া, হাইকোর্টের দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম পৃথকভাবে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলে দুদকে লিখিত আবেদন জমা দেন।
এই অভিযোগগুলোর কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ডা. মাহমুদুল হাসান ও তুহিন ফারাবি। তুহিন ছিলেন উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। আর ডা. মাহমুদুল পরিচিত ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ হিসেবে, যিনি দপ্তরের ভেতরে ও বাইরে নানা বিষয়ে প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদকে অভিযোগ গঠনের পর একে একে পদ হারাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ২২ এপ্রিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ করেন স্বয়ং উপদেষ্টাই।
এরও আগে, দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম তার পিও তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেন। অন্যদিকে, ২১ এপ্রিল এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কাগজ কেনা সংক্রান্ত কমিশন বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা ব্যক্তিগতভাবে সাড়া না দিলেও তদন্তের গতি কমবে না। প্রয়োজন হলে কমিশন নিজ উদ্যোগে জিজ্ঞাসাবাদ, অনুসন্ধান এবং তথ্যসংগ্রহ করবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এই মামলার প্রেক্ষিতে আরও বড় পরিসরে উপদেষ্টা দপ্তরগুলোর ভূমিকা ও জবাবদিহি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে ক্ষমতার অপব্যবহার কীভাবে দুর্নীতিতে রূপ নিচ্ছে, সেটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বাংলাধারা/এসআর