জবি শিক্ষার্থীদের গণঅনশন আজ, কাকরাইলে টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলন
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ১২:০২ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকেই তাঁরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে জড়ো হন। জুমার নামাজের পর শুরু হবে গণঅনশন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চার দফা দাবি, একটাই লক্ষ্য- অধিকার প্রতিষ্ঠা
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে চারটি মূল দাবি-
১. ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি,
২. পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট অনুমোদন,
৩. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন, এবং
৪. আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও বিচার।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছউদ্দীন জানান, “আমরা ভিক্ষা চাইতে আসিনি, অধিকার আদায়ে এসেছি। পুলিশ আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করেছে তা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নয়। আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরব না।”
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১৪ মে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়েছে ‘জবি ঐক্য’। একই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০টি বাসে করে কাকরাইলে যান শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে যান চলাচল ব্যাহত হলেও, শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিবহনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখে।
বুধবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে জবির শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা পরিষদের বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে পদযাত্রা শুরু করলে গুলিস্তান মাজার গেট ও মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গরম পানি নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
হামলার ঘটনার পর বুধবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসভবনে পৃথক দুটি বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন। দীর্ঘ আলোচনার পরও কোনো সমাধান আসেনি বলে জানা গেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু তালহা বলেন, “আমরা জুমার নামাজের পর গণঅনশনে বসব। হল চেয়ে যাচ্ছি না, অধিকার চেয়ে এসেছি।”
আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা সরাসরি অন্যায়। আমরা ভয় পাই না, চোখ রাঙিয়ে দাবির আন্দোলন দমন করা যাবে না।”
সংক্ষেপে দাবি ও কর্মসূচি:
- ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি
- পূর্ণাঙ্গ বাজেট বরাদ্দ
- দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন
- পুলিশি হামলার তদন্ত ও বিচার
- ১৪ মে কালো দিবস পালনের ঘোষণা
- অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন
- আজ জুমার পর থেকে গণঅনশন শুরু
এই আন্দোলন শুধু জবির নয়, বরং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতের কাঠামোগত দুর্বলতার প্রতিবাদ ও পরিবর্তনের এক প্রতীক হয়ে উঠছে। তরুণদের এই সোচ্চার অবস্থান রাজনীতির বাইরে দাঁড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ের লড়াইয়ে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে।
বাংলাধারা/এসআর