ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নগর ভবনে লাগাতার অবরোধ, বন্ধ নাগরিক সেবা: 'জনতার মেয়র' হিসেবে শপথ চান ইশরাকের সমর্থকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০১:৪৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতা ও ঢাকাসিটির সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে ‘জনতার মেয়র’ হিসেবে শপথ নেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সকল নাগরিক সেবা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে জাতীয় সংগীত ও দেশপ্রেমমূলক গান বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। দাবির প্রতি সংহতি জানাতে কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী মঞ্চ ঘিরে অবস্থান নেন।

ফলে নগর ভবনের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দাপ্তরিক কার্যক্রম থেমে গেছে পুরোপুরি। ব্যাহত হচ্ছে ২৮টি নাগরিক সেবা, যা প্রতিদিন হাজারো মানুষের প্রয়োজন মেটায়।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা আসমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "তিন দিন ধরে একটা নথি তোলার জন্য আসছি, কিন্তু ফটকে ঢুকতেই দিচ্ছে না। কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগও নেই।"

নগর ভবনের সামনে অবস্থানের প্রভাব পড়েছে আশপাশের রাস্তাঘাটেও। বঙ্গবাজার থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

অবস্থানকারীরা দাবি তুলেছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে দ্রুত মেয়র হিসেবে শপথ নিতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করছেন তারা।

ছাত্রদল কর্মী সুমন হাসান বলেন, "সরকার আদালতের রায় মেনে ইশরাক ভাইকে শপথ করাচ্ছে না। এর পেছনে মূল ভূমিকা নিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। যতদিন ইশরাক ভাই মেয়রের দায়িত্ব না বুঝে পাচ্ছেন, আমরা অবস্থান চালিয়ে যাব।"

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, শপথ না হওয়া পর্যন্ত নগর ভবন অচল থাকবে এবং প্রয়োজনে আন্দোলনের আরও কঠোর ধাপে যাবেন তারা।

জানাগেছে, সচিবালয়ের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কিছু দপ্তর সাময়িকভাবে নগর ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু চলমান অবরোধের কারণে সেই দপ্তরগুলোর কার্যক্রমও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও তার অফিসে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

লালবাগের ব্যবসায়ী আদিলুর রহমান বলেন, "ইশরাককে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালত এখন তাকে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন যতদিন তার মেয়াদ থাকে, ততদিন তাকে চেয়ারটিতে দেখতে চাই আমরা।"

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই লাগাতার আন্দোলনের প্রভাব শহরের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক সেবায় পড়েছে। রাজধানীবাসী অপেক্ষায়—এই অচলাবস্থা কবে শেষ হবে এবং আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব কবে বুঝে নেবেন।

 

বাংলাধারা/এসআর