পুশ-ইন ব্যর্থ: সীমান্তে বিজিবি-জনতার দৃঢ় অবস্থানে পিছু হটল বিএসএফ
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ১২:৪৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল সীমান্তে গভীর রাতে ঘটে গেল এক নাটকীয় ঘটনা। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রায় ৭৫০ জন মানুষকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের চেষ্টা করে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও শতাধিক স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি ও প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা।
ঘটনার আগেই বিজিবির হাতে পৌঁছায় গোপন গোয়েন্দা তথ্য। সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির ২৫ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সিঙ্গারবিল সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নেন। একই সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে শুরু হয় মসজিদে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাড়া দিয়ে নলঘরিয়া, বিষ্ণুপুর, মেরাসানী, নোয়াবাদীসহ আশপাশের গ্রামগুলো থেকে শতাধিক মানুষ ছুটে আসেন সীমান্তে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, “বিজিবির কাছ থেকে খবর পেয়েই রাতেই আমরা এলাকায় মাইকিং করি। সবাই মিলে সীমান্তে জড়ো হই। তখনই দেখা যায় বিএসএফ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।”
আরেক ইউপি সদস্য মামুন চৌধুরীর ভাষ্য, “বিএসএফ একেবারে গোপন কৌশলে পুশ-ইন করতে এসেছিল। কিন্তু স্থানীয়দের জেগে ওঠা এবং বিজিবির কড়া অবস্থানের কারণে তারা আর আগাতে পারেনি।”
বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ বলেন, “আমরা গোয়েন্দা তথ্যে আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম। স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিহত করতে পেরেছি।”
বিজয়নগরের ইউএনও সাধনা ত্রিপুরা জানান, বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছে।
ঘটনার পর থেকে সিঙ্গারবিল সীমান্তে বিজিবির টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যদিও বর্তমানে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এখনও রয়ে গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, বিএসএফ রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়ে দিতে চেয়েছিল এমন লোকজনকে, যাদের সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হয়তো কোনো সুনির্দিষ্ট পরিচয় নেই। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, সীমান্ত সুরক্ষায় কেবল রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নয়, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তারা জেগে না উঠলে হয়তো দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারত।
সিঙ্গারবিলে এই ঘটনা যেমন তাৎক্ষণিক একটি পুশ-ইন রুখে দিয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও এক সতর্কবার্তা। সীমান্ত সুরক্ষায় শুধু কাঁটাতার নয়, প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ের কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা।
এই ঘটনায় বিজিবি ও স্থানীয় জনগণ একত্রে যে সাহসী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়- ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কেন এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে এবং এর পেছনে তাদের অভিপ্রায় কী?
বাংলাধারা/এসআর